ঈদের ছুটি কাটাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছুটে এসেছেন পর্যটকরা। শুক্রবার (৬ মে) চার কিলোমিটার সৈকত জুড়ে নেমেছেন অন্তত দুই লাখ পর্যটক।
মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক সৈকতে এসেছেন। তারা আনন্দে মেতেছেন সৈকতের নোনাজলে। তীব্র গরমও ভ্রমণপিপাসু এসব মানুষের আনন্দে বাধ সাধতে পারেনি।
এদিকে পর্যটকের আগমনে দারুণ খুশি সৈকতের হকাররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে কূলে। আর সেই ঢেউয়ে মেতে উঠছেন শিশু, নারী ও পুরুষরা। সৈকতের সব কটি পয়েন্টে পরিবার-পরিজন বা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে দলে দলে পানিতে নামছেন তারা।
পর্যটক সাইফ আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসি। দুদিন এখানে ঘুরেফিরে আবারও ঢাকায় ফিরব। ঈদের ছুটিতে পরিবারকে সময় দেওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য।
আরেক পর্যটক মুস্তাকিম বলেন, তীব্র গরম পড়ছে। তার মাঝেও কক্সবাজার সৈকতে ঘুরে বেশ মজা পাচ্ছি। কিছুক্ষণ নোনাপানিতে গোসল করছি, আবার বালিয়াড়িতে উঠে বালি নিয়ে খেলা করছি। ছুটিটা বেশ উপভোগ করছি এখানে এসে।
চাকরিজীবী তরিকুল ইসলাম বলেন, সব সময় কর্মব্যস্ত থাকতে থাকতে ইট-পাথরের দালানে আর ভালো লাগছিল না। এজন্য ঈদের ছুটিতে সৈকতে ছুটে আসা। এখানে মুক্ত আকাশ, বিশাল সৈকত ও নীল জলরাশি, সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে।
পর্যটক আগমনে সৈকতে চাঙা হয় পর্যটন ব্যবসা। এবারের ঈদুল ফিতরের বিপুলসংখ্যক পর্যটক ছুটে আসায় দারুণ খুশি সৈকতের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ওয়াটার বাইক, ফটোগ্রাফার, কিটকট ব্যবসায়ী ও হকাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ওয়াটার বাইকচালক সোনা মিয়া বলেন, পর্যটক এলেই আমাদের ব্যবসা হয়। দুই বছর পর এবার করোনামুক্ত ঈদে কক্সবাজারে পর্যটক আসায় আমরা খুব খুশি। এখন ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। ক্ষতিও পুষিয়ে নিতে পারব।
সি সেইফ লাইফ গার্ডের সিনিয়র লাইফ গার্ড ওমর ফারুক বলেন, আবহাওয়া কিছুটা খারাপ থাকায় সাগরে ঢেউ বেড়েছে এবং কিছুটা উত্তাল। ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসায় সীমিত লাইফ গার্ড কর্মী দিয়ে এত মানুষের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা দেওয়াটা অনেক কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে সমুদ্রস্নানে নির্দেশনা ও লাইফ গার্ড কর্মীদের পরামর্শ মেনে চলার অনুরোধ করেন তিনি।
জানা যায়, কক্সবাজারে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে। কোথাও কোনো কক্ষ খালি নেই। সব হোটেল শতভাগ বুকিং রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো।
পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশে পুলিশের নারী সদস্যরা সৈকতে অবস্থান করছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, ঈদের ছুটির প্রথম তিন দিনে অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটক সৈকত ভ্রমণে এসেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও খাবার পানি সরবরাহ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। মাদকসেবী, ছিনতাকারীদের প্রতিরোধের পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবির থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আটকাতে হচ্ছে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন সৈকতসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০০ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে আজ দুপুর পর্যন্ত সৈকতে কোনো রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়নি বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সৈকতের পাশাপাশি শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে গিয়ে অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রটদের মুঠোফোন নম্বর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে পর্যটকদের সুবিধার্থে।