অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। কাউন্টারে টিকিট কিনতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেকে আবার পাচ্ছেন না নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট। এছাড়া কাউন্টারগুলোতে টিকিট দিতে হিমশিম খাচ্ছেন রেলওয়ের বুকিং সহকারীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, কোনো ধরনের প্রস্তুতি না নিয়ে হুট করে সারাদেশে অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এখন টিকিট কাটতে কাউন্টারে যেতে হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পাওয়া যাচ্ছে না নির্ধারিত গন্তব্যের টিকিট। রেল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান যাত্রীরা।
বুধবার (২৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে দেখা যায়, স্টেশনে হাজারো মানুষের ভিড়। তারা টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এই লাইন কাউন্টার থেকে স্টেশনের বাইরে পর্যন্ত চলে গেছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য চিৎকার করছেন যাত্রীরা। অপরদিকে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন রেলের কর্মীরা। এর মধ্যে যারা টিকিট পাচ্ছেন তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। তাড়াহুড়ো করে উঠছেন ট্রেনে।
সকাল ৭টায় কিশোরগঞ্জের ট্রেনের টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন আতাউর রহমান। কিন্তু তিনি সকাল ৯টা পর্যন্ত কোনো টিকিট পাননি।
আলাপকালে আতাউর রহমান বলেন, তার ট্রেন বেলা ১১টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাবে। কিন্তু টিকিটের জন্য সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখন পর্যন্ত টিকিট পাইনি। লাইন সামনে এগুচ্ছে না। টিকিট নিয়ে এমন ভোগান্তি আর হয়নি।
অপরদিকে ২৫ মার্চের চট্টগ্রামের টিকিট কিনতে ভোরে কমলাপুর রেল স্টেশনে যান আকরাম হোসেন। তিনি দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাননি। কাউন্টারের সামনে তার টিকিট প্রত্যাশী আরও চারজন দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
আকরাম হোসেন বলেন, আগে অনলাইনে খুব সহজেই টিকিট পেতাম। টিকিটের জন্য কখনো স্টেশনে দাঁড়াতে হয়নি। কিন্তু এখন লাইনে দাঁড়িয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গরমে সবাই অস্থির।
এছাড়া রাজশাহী থেকে সকাল ৮টায় ট্রেনে করে কমলাপুর রেল স্টেশনে নেমেছেন কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে ট্রেনের টিকিট কিনতেও ভোগান্তি হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি না নিয়ে এভাবে অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। রেলওয়ের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সব সময় মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে।
যাত্রীদের এমন ভোগান্তির কারণ জানতে চাইলে ট্রেনের টিকিট বিক্রেতা আবু কাউছার বলেন, আগে কম্পিউটারে টিকিট কাটতে হতো। এখন হাতে লিখে টিকিটের গায়ে সিল দিতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি। মানুষের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ২৬ মার্চের পর এই ভোগান্তি থাকবে না।
এ বিষয়ে জানতে কমলাপুর রেল স্টেশন মাস্টারের রুমে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এর আগে গত ১৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে ২১-২৫ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
ওইদিন তিনি বলেন, টিকিট বিক্রিতে অভ্যন্তরীণ সেটআপের জন্য পাঁচদিন সময় নিয়েছে ‘সহজ’। ২৬ মার্চ থেকে তারা ট্রেনের টিকিট বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, আগে পাঁচদিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হতো, এই সময়ে সেটা দেওয়া হবে না। কাউন্টার থেকে আজ ও আগামীকালের টিকিট দেওয়া হবে। এখানে কোনো কোটা বা আসন সংরক্ষণ থাকবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, ২০০৭ থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করছে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সিস্টেম (সিএনএস)। তাদের সঙ্গে রেলওয়ের ১৫ বছরের চুক্তি ছিল। গত ২০ মার্চ শেষ হয়েছে এই চুক্তি। এরপর টিকিট বিক্রির জন্য নতুনভাবে টেন্ডার করা হয়। এই টেন্ডারে কাজ পায় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ‘সহজ লিমিটেড’। আগামী ২৬ মার্চ থেকে তারা টিকিট বিক্রি শুরু করবে।
সিএনএসের কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘সহজে’র কার্যক্রম কেন শুরু হয়নি বা আরও আগে কেন টেন্ডার করা হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়নি রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ‘সহজে’র সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং সিস্টেম (বিআরআইটিএস) ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই, ইনস্টল, কমিশন, অপারেট, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতি টিকিটের জন্য ‘সহজ’কে ২৫ পয়সা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। যেখানে সিএনএসকে দিতে হতো প্রায় তিন টাকা। আগামী ১৮ মাস তারা আগের সার্ভারে (রেলওয়ের নিজস্ব সার্ভার) কাজ চালিয়ে যাবে। এরপর প্রয়োজন হলে টিকেটিং সিস্টেমে পরিবর্তন আনবে এবং নিজস্ব সার্ভারে কাজ করবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।