উচ্ছেদ মামলায় আদালতের রায় বাস্তবায়নে সাতকানিয়া থানা পুলিশ ও সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের নাজিরও অন্যান্য কর্মকর্তাসহ একসঙ্গে পর পর তিনবার দখল বুঝিয়ে দিলেও আইনের পক্ষে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দখল টিকাতে পারছেননা বলে অভিযোগ ওঠেছে উপজেলার কালিয়াইশের ৫নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল বারীর ছেলে মোঃ ফোরকান (৪০), মোঃ আবিয়া, জাহেদা বেগম, হামিদা বেগম, রেজিয়া বেগম, মিজান, বাচা মিয়া গংদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে দীর্ঘ ৩৫ বছর মামলা মোকদ্দমা চালিয়ে উচ্ছেদ মামলার রায় বাস্তবায়ন করতে গেলে উপজেলার এককর্মকর্তাসহ উপস্থিত আদালতের নাজিরের সামনেই পুলিশের এক এসআইকেও মারধর করার জন্য উদ্যত হয় বলে সাতকানিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিস সুত্রে নিশ্চিত করেন।
তবুও মিজান গংদের বিরুদ্ধে এখনো কোন ধরনের আইনগত কার্যক্রম না হওয়ায় শংকা প্রকাশ করেন দীর্ঘ ৩৫ বছর পর্যন্ত মামলা চালিয়ে রায় পাওয়া আহমদ মিয়ার ছেলে কবির আহমদ গংরা। এদিকে ২৮শে অক্টোবর শুক্রবার সকালে উপজেলার কালিয়াইশের ৫নং ওয়ার্ডে সেই বহুল আলোচিত মিশ্রিবর বাড়ি নামক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে আদালতের রায়ে আদালতের কর্মকর্তাসহ সাতকানিয়া থানার পুলিশ প্রশাসনও সাতকানিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রেজওয়ান কর্তৃক আহমদ মিয়া গংকে লালশালুও ঢোলতবলা বাজিয়ে প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দেয়া জায়গা আবারো স্থানীয় প্রভাবশালী ফোরকানও মিজানের নেতৃত্বে ভাংচুর করে পুনরায় মিজানরা দখল করার জন্য আদালতের আদেশ বহির্ভূত কর্মকান্ড চালানোর দৃশ্যের দেখা মেলে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এক অদ্ভুত ইউনিয়ন সাতকানিয়ার কালিয়াইশের ৫নং ওয়ার্ডের মিশ্রী বর বাড়ি, যেখানে আইন প্রয়োগে আদালতের নির্দেশে পুলিশও নিরাপদ নয় বলে গত ২০শে সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রেজওয়ান উদদীন সাক্ষরিত স্বারক নং ৪১.০১.১৫৮২.০০০.১৬.০০১.২২.২১৫ পত্রমূলে স্বয়ং সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতকে অবহিত করেন। অপরদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেই আলোচিত স্পটে ঢুকার ব্রিক সলিং রাস্তার প্রবেশ পথে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও গনমাধ্যমকর্মী এবং আদালতের রায় পাওয়া আহমদ মিয়া গংদের ঠেকাতে বসানো হলো গ্রাম্য চেকপোষ্ট, আর গনমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেলে ওই জায়গায় যেতে চাইলে ফোরকান আর মিজানদের জমা দিতে হয় মোবাইলও ক্যামেরা-যেটা সভ্যদেশে সম্ভবত সাতকানিয়ার কালিয়াইশের ৫নং ওয়ার্ডের মিশ্রীবর বাড়ির ফোরকানও মিজানরা করে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ সিনেমা ষ্টাইলে। তবে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা বলে জানান ভুক্তভোগীও সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে দীর্ঘ ৩৫ বছর মামলা চালিয়ে ডিক্রী পাওয়া আহমদ মিয়ার মেয়ে গোলতাজ বেগমও স্বজনরা। আহমদ মিয়ার সন্তানাদির মধ্যে একজন গোলতাজ বেগমও স্বজন ইন্নামিন -তারা উভয়েই গনমাধ্যমকে জানান- সাতকানিয়া আদালত থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে পর্যন্ত আমরা রায় পেলাম তবে রায় আমরা টিকাতে পারছিনা পুলিশ প্রশাসনের অবহেলার কারণে। গোলতাজ বেগমের পিতা আহমদ মিয়া ১৯৮৫সালে পার্শ্ববর্তী কিছু লোক নুরুল হাকিমের ছেলে আব্দুল হাকিমও আবু তাহের, ফাতেমা খাতুনদের বিরুদ্ধে গত-------সালের বন্ধকী দলিলের বিএস জরীপের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে অপর ১০১/৮৫মামলা দায়ের করেন। আর সেই মামলার রায় পান গোলতাজ বেগম/আহমদ মিয়া, আবার সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল, এবং সর্বশেষ আপীলেও আহমদ মিয়ার পক্ষে রায় বহাল রাখেন সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতসহ দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টসহ সব বিভাগে। পরে ওই আদালতের রায় অনুযায়ী নিরুপায় বাদী আহমদ মিয়ার কন্যা গোলতাজ বেগম প্রাপ্ত জায়গা দখল নিতে না পারলে পূর্বের রায়ে আবার উচ্ছেদ মামলা করেন, যাতে ডিক্রী প্রাপ্ত জায়গা আদালত কর্তৃক দখলে নিতে পারেন। সেই দখল নেয়ার মামলায়ও পূর্বের মত মামলার রায় পান ভুক্তভোগী আহমদ মিয়া গং এর পক্ষে গোলতাজ বেগম। পরে সেই উচ্ছেদ মামলার নিয়ম অনুসারে ভুক্তভোগী আহমদ মিয়া গং এর পক্ষে সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের সুপারিশক্রমে ২০১২সালে একবার, ২০১৯সালে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের স্বারক নং ১৬৪২/১(৩)২য় মূলে একবার, সর্বশেষ ২০২২সালে ২৩শে আগষ্ট সাতকানিয়া থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে একই জায়গা সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের পক্ষে নাজির আব্দুল হান্নান এই দখল বুঝিয়ে দেন। কিন্তু বুঝিয়ে দেয়ার পরে ওই দখল আর আহমদ মিয়া গং এর পক্ষে থাকেনা। স্থানীয় ফোরকান আর মিজানদের দখলবাঁজির কাছে আদালতের রায়ও আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা বার বার হার মানে। এক পর্যায়ে উচ্ছেদের আদেশ না মানলে এবং আদালত কর্তৃক দখলে পাওয়া ভুক্তভোগী আহমদ মিয়ার কন্যা গোলতাজ বেগম আবারো সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে আপত্তি জানালে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সাতকানিয়া থানা ওসি বরাবরে আদালতের স্মারক নং ২১৯ এবং অপরজারী মামলার আদেশ নং ৬০ মূলে একটি নির্দেশনা প্রদান করেন। আদালত কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারও থানার ওসি -আবার ওসি কর্তৃক থানার এসআই চন্দন কুমার আদালতের রায় ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পেলেও বেপরোয়া মিজান আর ফোরকানদের এখনো নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়নি পুলিশের এই এসআই চন্দন কুমারসহ পুরো পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে। তবে সাতকানিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রেজোয়ান উদদীন সাক্ষরিত গত ২০শে আগষ্ট সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় তার উপস্থিতিতেই সাতকানিয়া থানার একজন সাব -ইন্সপেক্টরকে মিজানও ফোরকানরা শাবল দা ছুরি দিয়ে মারধর করার জন্য আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। তবুও ফোরকান, মিজানের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় বিহীত কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় আদালতে রায় পাওয়া ভুক্তভোগী গোলতাজ গত ৫ই সেপ্টেম্বর আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরা বরাবরেও একটি আবেদন প্রদান করেন। এদিকে অভিযুক্ত কালিয়াইশের ৫নং ওয়ার্ডের মিজান, ফোরকান জানান-আদালতের রায় এবং উচ্ছেদ মামলার একাধিক অর্ডারও ডিক্রী সব ভূয়া, আমরা এই আদেশ মানিনা। আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দোকানে বসে ষ্ট্যাম্প করে ২ লাখ টাকা জমা নিয়ে যে গ্রাম্য শালিস বসবে সেটাই মানব। আপনারা পুলিশও আদালতের আদেশ অর্ডার, রায় বাদ দিয়ে কথা বল্লে আমরা সেটা মানব। আর আপনারা আমাদের সাথে শুধু সাংবাদিক হিসেবে কথা বলতে পারছেন অন্য কেউ কথা বলতে আসলেই কচুকাটা হবে, তবে ছবি তোলা যাবেনা -এবং আপনার মোবাইল ক্যামেরা পকেটে ঢুকান। আমাদের মনে হচ্ছে আদালতের রায় আর পুলিশের মত আপনারাও সিন্ডিকেট করে আমাদের এখানে আসলেন! পরে সাংবাদিকতার কার্ড প্রদর্শন করলে একটু শান্ত হলেও ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে সরাসরি বারণ করা হয়। এদিকে সাতকানিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদকও সরকারি আইনজীবি মেজবাহ উদদীন আহমদ চৌধুরী কচির বলেন-সভ্য যুগে এসে মাননীয় আদালতের ডিক্রীকে ভুয়া আর প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এখনো কিভাবে বহালতবিয়তে থাকে সেটাই তো প্রশ্ন, পুলিশকে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কেন গড়িমসি হবে? এবং মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি সুজিত পালিত বলেন- যেহেতু দখলকারীকে পুনরায় বেদখল করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে সেহেতু আইনের বিধান মোতাবেক আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিব। সর্বশেষ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কেন প্রতিপক্ষকে ঠেকানো যাচ্ছেনা এমন প্রশ্নের বিষয়ে সাতকানিয়া থানার এসআই চন্দন কুমার রায় বলেন-হ্যাঁ আদালত দখল বুঝিয়ে দিলেও তারা দখল রাখতে পারছেনা কেন? আমরা একবার গেছিলাম না শুনলে তা আদালতকে অবহিত করা হবে। এদিকে এই বিষয়ে-কালিয়াইশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গনমাধ্যমকে বলেন- আদালতের রায়ের বাইরে কথা বলার কারো এখতিয়ার নেই, মহামান্য আদালতের রায়কে শ্রদ্ধা করেই সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে জানান-মিজান, ফোরকানদের কথাবার্তাগুলি সরাসরি দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী, আদালতের সব আদেশ ভূয়া এসব কথাবার্তাগুলির কারণে সমাজে দেশের আইন সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তাই দ্রæত তাদের গ্রেফতার করে মহামান্য আদালতের রায় কার্যকর করে সমাজে দ্রæত নজির স্থাপন করা জরুরী।