বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মিরসরাই উপজেলা শাখার একাংশের ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের কাছে প্রায় চার ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। শনিবার (১৭ আগস্ট) উপজেলার ১২নং খৈইয়াছড়া ইউনিয়নের নয়দুয়ার এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুপের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মনিরুল ইসলাম ইউসুপের ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও ডিজিটাল ব্যাংকিং নগদ এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সমর্থিত প্রায় সহ্রাধিক নেতাকর্মী তাদের অবরুদ্ধ করেন। এসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নয়দুয়ার এলাকায় ঢাকামুখী অংশে গাড়ি চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিলো।
গোলাম আকবর খোন্দকারের গাড়ি বহরে ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক ও মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন, সাবেক আহŸায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহŸায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী সহ কয়েকজন নেতাকর্মী।
জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ত্যাগী মরহুম নেতাদের কবর জিয়ারত করতে শনিবার মিরসরাইয়ে আসেন চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির আহŸায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। এসময় বেলা ১২টার দিকে পথে বাংলাদেশ মক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বড়তাকিয়া গ্রæপের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ইউসুপের বাড়িতে যান তিনি। এ খবরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সমর্থিত নেতাকর্মীরা দলে দলে জড়ো হয়ে বাড়িটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং বাড়ির পাশ^বর্তী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় নেতাকর্মীরা মনিরুল ইসলাম ইউসুপ ও নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের নাম ধরে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম শামীমের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। খবর পেয়ে মিরসরাইয়ে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা বেলা ৪টার দিকে মনিরুল ইসলাম ইউসুপের বাড়িতে গিয়ে বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খোন্দকার সহ অবরুদ্ধ হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে নিরাপত্তা দেন। বিএনপি নেতাদের বহনকারী গাড়ির সামনে ও পেছনে নিরাপত্তা দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনীর দু’টি গাড়িকে। বিএনপি নেতাদের বহনকারী গাড়িতে উত্তেজিত কর্মীরা ভুয়া ভুয়া ¯েøাগান দিতে থাকেন। এসময় উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান নিজ অনুসারীদের শান্ত করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় গোলাম আকবর খোন্দকার ও যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল আমিনের সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করছেন আরেক যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহŸায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী।
এদিকে এ ঘটনায় পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন মিরসরাই উপজেলা বিএনপি ও অবরুদ্ধ বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খোন্দকার। এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও নগদ এর নির্বাহী পরিচালক, শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নিজের গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন এমন খবর ছিলো বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করতে ওই বাড়িতে যান বিএনপির জেলা আহŸায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। এ খবর শুনে দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের শিকার বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম আকবর ভাইকে উদ্ধার করতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে ফোন দিলে তিনি দ্রæত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন এবং সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় তাঁকে ফিরে যেতে সাহায্য করেন। ’
এদিকে ঘটনাস্থলে গেলে অবরুদ্ধ গোলাম আকবর খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনিরুল ইসলাম ইউসুপ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মিরসরাই উপজেলা বিএপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য। শনিবার তিনি আমাকে চায়ের দাওয়াত দিলে আমি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ইউসুপ সাহেবের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দলের কিছু নেতাকর্মীর মুখে শুনি ইউসুপ সাহেবের ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট যুবলীগ নেতা। এসব অভিযোগ কেউতো আমাকে আগে দেইনাই। স্থানীয় নেতাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দের কারণে একটি অংশ জড় হয়েছে। এটি কোন বিক্ষোভ নয় বলে তিনি দাবি করেন।’
উল্লেখ্য, মিরসরাই উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দু’টি আলাদা গ্রæপে পরিচালিত হয়। এটির একটির নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল আমিন। অপরটির নেতৃত্বে আছেন আরেক যুগ্ম আহŸায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। যিনি সর্বশেষ ২০১৮ সালে মিরসরাই আসন থেকে বিএনপির হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ২০১৪ সালে দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন।