পল্লী বিদুৎ সংক্রান্ত যত অনিয়মের কাজ আছে তার অসাধ্য কিছু নেই । সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করা তার বা হাতের খেল। এক সময় ছিলেন বোয়ালখালী পল্লী বিদুৎ সমিতির সামান্য ইলেকট্্েরশিয়ান। সামন্য মজুরীতে কাজ করলেও এখন তার অর্থ বিত্তের অভাব নাই। তার দাপটের কাছে অসহায় বোয়ালখালীর সাধারণ গ্রাহক। জোর করে জনবসতির উপর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন, গ্রাহক হয়রাণী থেকে শুরু করে টাকা দাবীসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। অভিযোগ চরম পযার্য়ে পৌছালে এক সময় তাকে পল্লী বিদুৎ সমিতি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কয়েক বছর বেকার থেকে আবার তিনি ঠিকাদার হিসেবে পল্লী বিদুৎ সমিতিতে সংযুক্ত হন। এখন তাকে ঠেকাই কে। কোন কাজের টেন্ডারের ওর্য়াক অর্ডার ছাড়াও তিনি এখন পল্লী বিদ্যুতের যে কোনকাজ করতে পারেন। বলছিলাম আমাদের বোয়ালখালরি চরণদ্বীপ ইউনিয়নের সৈয়দ নগর এলাকার বাসিন্দা আবু আলমের কথা। তার ভয়ে সবাই কাবু।
বিত্তশালীদের জায়গার দাম বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে অভিনব কায়দায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সাথে সিন্ডিকেট করে বোয়ালখালীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করছেন তিনি। ফলে কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই বোয়ালখালীতে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখায় হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিভিন্ন মিল, কারখানাসহ সাধারণ গ্রাহকরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সূত্রে জানা গেছে, সাব স্টেশনের পাশের এক বিত্তশালী প্রবাসীর কিছু জমি থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনা তার ও বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর জন্য এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় স্থানীয় এক ব্যক্তির জমির ওপর থাকা খুঁটি ও তার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কোনো প্রকার বাজেট ছাড়াই সরিয়ে নিচ্ছে। এ কাজের জন্য প্রায় ২১ লাখ টাকা সমিতির কোষাগারে জমা হয়েছে। তবে কাজটির জন্য ৫৬ থেকে ৬০ লাখ টাকা সমিতি পাওয়ার কথা ছিল। এ অনিয়মের ফলে প্রায় ৪০ লাখ টাকা সমিতির হাত ছাড়া হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে ওই জমির ওপর থেকে বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি সরানো তদবির করে আসছিলেন জমির মালিক। কিন্তু গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এ সিদ্ধন্ত থেকে সরে আসেন। সম্প্রতি উপটৌকন পাওয়ায় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমিতির মূল টাকার পরিমাণ কমিয়ে খুঁটি ও তার সরিয়ে নিচ্ছেন। এতে সাব-স্টেশনের ৪টি ফিডারের হাজার হাজার গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎ প্রকৌশলীরা। ফিডারগুলো আলাদা আলাদা খুঁটিতে থাকলেও চারটি ফিডার এখন এক খুঁটিতে স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে কোনো একটি ফিডারে সমস্যা হলে সব ফিডারই বন্ধ রাখতে হবে। এ অবস্থায় সামনে রমজান ও গরমে জনসাধারণ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। এটি বোয়ালখালীবাসির দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি করা হচ্ছে। আর এর মূলহোতা ঠিকাদার আবু আলম। তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে হাতের ইশারায় নাচিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে র্ধ্বংস করছেন। কোন ধরনের ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া তিনি দিনের পর দিন মাসের পর মাস বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে বিত্তশালী ব্যক্তির তার ও বৈদ্যুতিক খুঁিট সরানোর কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আবু আলম বলেন, তিনি এ কাজের টেন্ডার পেয়েছেন। তার কাছে কোন ওর্য়াক অর্ডার নেই। সব কাগজ পটিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কাছে জমা আছে। ওর্য়াক অর্ডার ছাড়া কাজ করার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া কাজ করা যায়। কাজ শেষ করে পরে তিনি ওর্য়াক অর্ডার নেবেন বলে জানান।
এদিকে দিনভর বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় কাশেম স’মিল, কাদের স’মিল, বাবুল স’মিল, দরবার ফুডস, চৌধুরী রাইস মিল, আরিফ রাইস মিল ও জাপান ভিত্তিক ফিগো সুইটার ফ্যাক্টরীর মেশিন উল্টো ঘুরে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হলে তারা বিষয়টি পটিয়ার জিএমকে জানিয়েও কোন সুরাহা পায়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রাহকরা জানান,ঠিকাদার আবুর যোগসাজোসে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে এ ধরনের অন্যায় কাজ করছেন। আবু বোয়ালখালীর বাসিন্দা হয়ে দিনের পর দিন বোয়ালখালীর বিদুৎ্য ব্যবস্থার যে ক্ষতি সাধন করছেন এর বিচার আল্লাহ করবেন। এতো বড় অন্যায় করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারী ও ঠিকাদার কোন নেতা,এমপি,মন্ত্রী কেউ প্রতিবাদ করছেন না। আবুতো লাগামহীন দুর্নীতি করছেন। কাজের কোন ধরনের অনুমতি পত্র ছাড়া কিভাবে খুঁিট ও তার সরাতে পারেন। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে তাদের তলের বিড়াল বেেিয় আসবে। জামায়াত-বিএনপি ঘারানার এ লোক সরকারের কর্মকান্ডকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে কাজ করছেন বলে তারা মন্তব্য করেন তারা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বোয়ালখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার স.ম. মিজানুর রহমান বলেন, সারাদিন বিদ্যুৎ ছিলো না-এমনটা বলা যাবে না। সাব স্টেশনে শিফটিংয়ের কাজ চলায় আধ ঘণ্টা বা কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। যাতে গ্রাহকের ভোগান্তি না হয়। এ কাজ শেষ করার জন্য আরও কয়েকদিন কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হতে পারে। তিনি জানান সাময়িক কয়েক মিনিট বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার জন্য আগাম নোটিশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে সিনিয়র জেনেরেল ম্যানেজার দিলীপ চন্দ্রকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন তুলেননি।
এদিকে বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তী জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
কাজী আয়েশা ফারজানা
বোয়ালখালী,চট্টগ্রাম
০১৭৩২০৪৫৬২৬