আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-১৩ আসনে বিবর্ণ লাঙ্গল, নৌকার পরে জ্বলে উঠেছে মোমবাতি

মো. মহিউদ্দিন, কর্ণফুলী : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৭ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:৩৫:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা সমর্থিত প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চতুর্থ বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় আগে থেকেই সাধারণ মানুষের ধারণা ছিলো নৌকা জিতবেই। 

 

কিন্তু এ আসনে ভোটের ফলাফল দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ব্যাপক আলোচনা করছেন, সংসদের বিরোধীদল খ্যাত জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) কিভাবে হোঁচট খেয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের মোমবাতির কাছে। যদিও কর্ণফুলী-আনোয়ারায় ভোটের মাঠে প্রচার-প্রচারণায় নৌকার পরে দৃশ্যমান ছিলো জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুর রব চৌধুরী'র লাঙ্গল এর প্রচারণা। বলতে গেলে প্রচারে তেমনটা দেখা যায়নি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আবুল হোসেন (মোমবাতি) কে।

 

কিন্তু দুই উপজেলার ভোটের ফলাফলে দেখা যায় মোমবাতি এগিয়ে, লাঙ্গল পিছিয়ে। মানে নৌকার পরে মোমবাতির অবস্থান। কর্ণফুলী উপজেলায় লাঙ্গল পেয়েছেন ১ হাজার ৯২ ভোট ও মোমবাতি পেয়েছেন ১ হাজার ৬৬১ ভোট। একই সাথে আনোয়ারার লাঙ্গল পেয়েছেন ২ হাজার ২১৪ ভোট ও মোমবাতি প্রতীক পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৮০ ভোট।

 

ফলে, দুই উপজেলায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আবুল হোসেন (মোমবাতি) পেলেন ৫ হাজার ১৪১ ভোট। আর জাপা পেলেন ৩ হাজার ৩০৬ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থীর লাঙ্গল ডিঙিয়ে প্রথম বারের মতো  দ্বিতীয় অবস্থান তৈরি করেন।

 

অথচ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী নৌকা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮৫ ভোট। একই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির তপন চক্রবর্তী পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৪১৮ ভোট। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করেনি।

 

এরপরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছিলেন দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪১৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৮শ ৫৩ ভোট। ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের এম এ মতিন ৩ হাজার ৭৯৪ ভোট।

 

গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক (উদীয়মান সূর্য) ৮৪ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক (বটগাছ) ৯৮ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মো. ইরফানুল হক চৌধুরী (হাতপাখা) ৬৪৩ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (চেয়ার) ২ হাজার ১শ ১০ ভোট ও বিএনএফের নারায়ণ রক্ষিত (টেলিভিশন) প্রতীকে পেয়েছেন ৫৬১ ভোট। 

 

এবার দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভোটে অংশ না নেওয়ায় ফলাফল অনেকটা বিপরীত। তাহলে কী সাধারণ ভোটারেরা জাতীয় পার্টি থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নাকি রাজনীতির হাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টি (জাপা) নতুন কোনো অবস্থান যাচ্ছে। সে আলোচনা বেশ জোরালো হচ্ছে। চট্টগ্রাম-১৩ আসনের চিত্র দেখে।

 

কারো কারো মতে, ঘরোয়া বিবাদ ছাপিয়ে এই আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের কে নিয়েও। নানা পরিস্থিতিতে বলয় ভাঙার ইঙ্গিত। সাধারণ ভোটারকে আকৃষ্ট করেছে। তবে রাজনীতি-বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় জনগণের কাছেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না জাপা। যার খেসারত দিতে হচ্ছে দলটিকে।

 

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১১৮ কেন্দ্রের ফলাফলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী'র নৌকা  ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৫  ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

 

এছাড়াও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোসাইন (চেয়ার) ১ হাজার ৬৬৮ ভোট, তৃণমূল বিএনপির মকবুল আহমদ চৌধুরী সোনালী (আশঁ) ৮৩৭ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক (বটগাছ) ৬১৫ ভোট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. আরিফ মঈন উদ্দিন (একতারা) পেলেন ৬১৩ ভোট।

 

সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইশতিয়াক ইমন এবং কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়