- ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে
- পানিবন্দি ৭০ হাজার পরিবার
- মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙ্গে কোটি টাকার ক্ষতি
- ডুবে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম
- নিরাপদ আশ্রয়ে নিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনীর ছাগলনাইয়া হয়ে বয়ে যাওয়া ফেনী নদীর পানি প্রবাহ বিপদ সীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এতে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বুধবার দিবাগত বিকেল থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের উদ্যোগে বন্যা কবলিত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দিনভর পানিতে নিমজ্জিত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার আমলীঘাট, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নি¤œাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, অলিনগর গ্রাম, কাটাগাং, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর পূর্ব আজমনগর ও খিলমুরালী, ধুম ইউনিয়নের শুক্রবারইয়াহাট, মিনাবাজার, আনন্দবাজার গ্রামেও বন্যার পানি বাড়তেছে। বন্যায় পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেকের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি উঠে যাওয়ায় ¯øুইসগেট এর সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উপজেলার দুর্গাপুর, কাটাছরা ও ইছাখালী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় চট্টগ্রামমুখী অংশে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। এতে করে যানবাহন চলাচল করে অত্যন্ত ধীরগতিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ৬দিনের বৃষ্টিতে এবং ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলী জমি ও শতশত মাছের পুকুর ডুবে গেছে।
গত বুধবার বিকাল থেকে এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা বোট দিয়ে কিছু কিছু এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালেও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকলেও দুপুরের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উদ্ধার কাজে নামতে দেখা গেছে।
সংগীত শিল্পী ও স্বেচ্ছাসেবক মহিবুল আলম আরিফ জানান, পশ্চিম জোয়ার ও আজমনগর গ্রামের পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মহামায়া লেক থেকে বোট নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উপজেলার ধুম ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মেজবা উল মানিক জানান, এলাকার শুক্রবারইয়াহাট ও মিনাবাজার এলাকা বেশি প্লাবিত হয়েছে। এখানে আমরা নিজেদের উদ্যোগে দু’টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করেছি। আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ২ টার দিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধার ও তাদের খাবারের বন্দবস্ত করার তাগিদ দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জানান, বন্যার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা বন্যাদুর্গতদের মাঝে আমরা শুকনা খাবার বিতরণ করতেছি।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, মিরসরাইয়ে ৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২ হাজর ৫’শ জন আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে। মিরসরাই উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্ধি অবস্থায় আছে। জেলা প্রশাসক থেকে ৫০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকার তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার কাজে মনোনিবেশ করেছে।