দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী-আনোয়ারা, কেইপিজেড সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে চলছে 'মও' আতংক। 'মও আইয়ের' বললেই এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে শাহমীরপুর, দৌলতপুর, আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়ন ও কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) সংলগ্ন এলাকার মানুষরা।
'মও' অর্থ চট্টগ্রামের ভাষায় হাতি। রাত নামলেই এসব এলাকায় চলে হাতির রাজত্ব। দীর্ঘদিন ধরে এক সময়ের বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য খ্যাত দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থান নেয়া তিনটি বন্য হাতি সন্ধ্যায় সড়ক ও লোকালয়ে নেমে আসে।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পয়েন্টে নেমে আসে বুনো হাতি। কখনো ধানের গোলায় শুঁড় ডুকিয়ে দিয়ে ধান খেয়ে নেয়, কখনো ঘরের পেছনে ধুমধাম হামলা চালায়। কখনো লেকে নেমে জলখেলি,কখনো কলা ও নারকেল গাছ খেয়ে সাবাড় করে। এভাবেই চলছে দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থান করা বুনো হাতির রাজত্ব।
এই নিয়ে সন্ধ্যার পর এলাকাবাসী থাকে খুবই সজাগ। রাতে কোনখানে ঠুস শব্দ হলে 'মও আইয়ের' বলে চিৎকার করে একে অপরকে সজাগ করে দেয়৷ কেউ বাঁশি বাজায়, কেউ টর্চের আলোয় হাতি প্রতিরোধের চেষ্টা করে। বাজি ফুটিয়ে আবার কখনো মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে চলে 'মও' তাড়ানোর কাজ।
এলাকাবাসীর ধারণা হাতিকে 'মও' ডাকলেই হাতির বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ 'মও' অর্থ মামা। সাধারণত মামারা ভাগিনার প্রতি সবসময় সদয় থাকে৷ সেই ধারণায় স্থানীয়রা হাতিকে 'মও' ডেকে সদয় রাখার চেষ্টা করে।
শাহমিরপুর গ্রামের রুবেল বলেন, হাতিকে আমরা 'মও' বলেই ডাকি। হাতিকে 'মও' না ডেকে যদি হাতি ডাকি, তাহলে হাতি এসে যে কোন সময় হামলা চালিয়ে যাবে। 'মও' ডাকলে আর হামলা করার কোন সুযোগ থাকে না৷ চুপিসারে সম্মান দিয়ে চলে যাবে।
কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, বন্য হাতিগুলো প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এখানে ২২ টি কারখানায় কাজ করা প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার জন্য বের হতেই তারা হাতি আতংকে থাকেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা তো রীতিমতো প্রতিরাতে হাতি তাড়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, দেয়াঙ পাহাড় ছিল এক সময়ের অভয়ারণ্য। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল চট্টগ্রামের এই দেয়াঙ পাহাড়। নির্বিচারে পাহাড় কেটে সমান করে স্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন কারখানা৷ এর প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি। দেয়াঙ হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল। আজ আমরা তাদের আবাসস্থল ধ্বংস করেছি, তারা ও তার প্রতিশোধ নিচ্ছে।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা দৈনিক সাঙ্গুকে বলেন, হাতিগুলো তাড়াতে বন বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সচেতন আছি। এই নিয়ে নতুনভাবে হাতি তাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।