মিরসরাইয়ে ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রæপে দপায় দপায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই পৌর সদরের ফুট ওভারব্রীজের নীচে সর্বশেষ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়। রবিবার দুপুরে পৌরসভার তালবাড়ীয়া গ্রামে ছাত্রলীগকর্মী রিয়াদের বাড়িতে হামলা চালানো হয় ও তার বড় ভাইয়ের মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মোটর সাইকেল সহ দুইজন ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছে মিরসরাই থানা পুলিশ। একজন ইমতিয়াজ, অপরজন সাইমুন।
হামলায় আহতরা হলো, মিরসরাই কলেজ ছাত্রলীগ আহবায়ক কমিটি সদস্য শাহনেওয়াজ নিশাদ (২৬), ছাত্রলীগকর্মী রাজু (২৪), শাকিব (২৪), সজিব (২০), মো. হাসান (২০)। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) নেওয়া হয়েছে। মিরসরাই পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন লিটনের অনুসারী মিরসরাই কলেজ ছাত্রলীগ আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহনেওয়াজ নিশাদের গ্রæপের সাথে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহŸায়ক জাফর ইকবাল নাহিদ গ্রæপের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে মিরসরাই বিশ^বিদ্যালয় কলেজ সড়কে কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং এর ঘটনায় ছাত্রলীগের এক গ্রæপ অন্য গ্রæপকে ধাওয়া দেয়। এরপর গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরসরাই পৌরসভা মার্কেটের সামনে কলেজ ছাত্রলীগের আহŸায়ক কমিটির সদস্য শাহনেওয়াজ নিশাদ ও তার সহপাঠীদের ওপর হামলা হয়। হামলায় নিশাদ, রাজু, শাকিব ও সজিব, হাসান নামের পাঁর ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়। এরপর ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মিরসরাই পৌর বাজারের ফুট ওভার ব্রিজের নিচে আহত ছাত্রলীগ নেতা নিশাদের গ্রæপের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় মিরসরাই পৌরসভা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর। এসময় উপজেলা সড়কে জাফর ইকবাল নাহিদের গ্রæপের হাসান নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করার সময় হাসানের মা নিজের সন্তানকে বাঁচাতে পেছন পেছন দৌঁড়াতে দেখা যায়। মায়ের আকুতিতে ছেলের উপর হামলা বন্ধ করেনি প্রতিপক্ষ গ্রæপের কর্মীরা। সর্বশেষ ওইদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পুনরায় কলেজ ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ নিশাদ কর্মীরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ তালবাড়ীয়া গ্রামে হামলা চালায় জাফর ইকবালের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াদের বাড়িতে। এসময় তারা ঘরের দরজা জানালা ভাংচুর করে এবং রিয়াদকে না পেয়ে তার এবং তার বড় ভাই সালমানের ১টি মোটর বাইকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও ১ টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। হামলার ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ নিশাদ অভিযোগ করেন, ‘গত শনিবার সকালে আমার কলেজের এক শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে আসলে কয়েকজন বখাটে তাকে ইভটিজিং করে। এসময় আমরা বখাটেদের ধাওয়া করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ ঘটনার জেরে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহŸায়ক জাফর ইকবালের অনুগতরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়।’
অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহŸায়ক জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি পারিবারিক কাজে নারায়নগঞ্জে আছি। যে ঘটনা ঘটেছে এটি একটি ইভটিজিং এর ঘটনা। ঘটনার সাথে অহেতুক আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্টো মোবাইল ফোনে ফোন করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’
মিরসরাই বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবছার বলেন, ‘কলেজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে আসতে পারে। তবে ক্যাম্পাসে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। ক্যাম্পাসের বাহিরে ঘটতে পারে। তবে আমাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি।’
এ বিষয়ে মিরসরাই থানার সেকেন্ড অফিসার (উপ-পরিদর্শক) রাজিব পোদ্দার জানান, ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের মারামারির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছে। ঘটনার পরপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এঘটনায় ছাত্রলীগের ২ জনকর্মীকে আটক ও ২টি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।