চট্টগ্রাম বন্দরে টেন্ডারের কাজ নিয়ে দেওয়ার নামে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মহিউদ্দিন নাজির (৩০) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। বন্দরের অভ্যন্তরে ট্রাফিক বিভাগে চাকরির আইডি কার্ড দেখিয়ে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্টানে কর্মরত মাহমুদুল করিম থেকে ও তার মাধ্যমে ইসমাইল হোসেন জুয়েল,এনামুল হকসহ তাদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের থেকে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা মহিউদ্দিন নাজির।
ভুক্তভোগী মাহমুদুল করিম জানান,২০২১ সালের শুরুতে চট্টগ্রামের চকবাজারস্থ গুলজার টাওয়ারে জিসানের সাথে পরিচয় হয় বন্ধুর মাধ্যমে।
পরিচয় পর্বে জিসান নিজেকে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দেন এবং বন্দর চেয়ারম্যান, সিনিয়র কর্মকর্তাগণের সাথে সখ্যতার কথা উল্লেখ করেন।
ধীরে ধীরে জিসান আমাদের পরিচিতজন, বন্ধু মহলের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকে।এরই মাঝে জিসান আমাদের প্রত্যেককেই বন্দরে কাজ নিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা খুজতে থাকেন।এমতাবস্থায় আমরা বন্ধু-বান্ধব মিলে বন্দর কেন্দ্রীক ব্যবসা করার আগ্রহ প্রকাশ করলে জিসান আমাদেরকে নানা প্রলোভনে প্রলুব্ধ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে বন্দরের বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করতে জিসান আমাদের পরিচিতজনদের থেকে লাখ টাকার লাভ দেখিয়ে কাজ নিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীক পার্টনার হওয়ার শর্তে সবমিলিয়ে প্রায় প্রায় ৩৮ লাখ টাকা নেয়। যার বিপরীতে সমপরিমাণের চেক ব্যাংকে তার নামে খোলা ব্যাংক হিসাব থেকে চেক প্রদান করে ও এসম্পর্কিত চুক্তিপত্র সাক্ষরিত হয়।মাসের পর মাস অতিবাহিত হলে সবাই মিলে যোগাযোগ করলে সে আমাদের বিভিন্ন বাহানায় কালক্ষেপন করতে থাকে।এমনকি কারো ফোনও রিসিভ করছেনা।
ভুক্তভোগী এনামুল হক জানান ,জিসান কারো ফোন না রিসিভ না করায় নিরুপায় হয়ে আমরা তার পরিবারের সদস্যদের জানানোর স্বীদ্ধান্ত নিই। মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা,তার চাচা, বড় বোনের সাথে যোগাযোগ করি,তারা প্রত্যেকে আমাদের টাকার বিষয়ে ওয়াকিবহাল বলে জানান এবং জিসানকে নিয়ে অতিশীঘ্রই আমাদের প্রত্যেকের যার যার প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করার অঙ্গিকার করেন তাদের প্রত্যেকের সাথে ফোনে কথা বলার রেকর্ড আমাদের কাছে সত্যতা যাছাইয়ের জন্য সংরক্ষিত আছে।
আরেক ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন জুয়েল বলেন, জিসানের পরিবারের সাথে কথা বলার পরে জিসান আমাদের সাথে দেখা করে তার নিজের নামে খোলা ঢাকা ব্যাংকের একাউন্ট নং (০১৯২৫৫১৫৬১২) থেকে(৬৬২২৪৬০,১১২২১০৫-চেক নং) ২টি ১টিতে ১লক্ষ ১২হাজার অপরটিতে ৩৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিমাণের এবং তার স্ত্রীর নামে সিটি ব্যাংক লিমিটেড’র একাউন্ট নাম্বার-২২২২৫৭৫৪০৬০০১ (০০১৬৪৫৮-চেক নং) ১টি চেক দেন যাতে ১ লক্ষ টাকা উল্লেখ করেন দুঃখের বিষয় সে চেকখানি ব্যাংকে নিয়ে গেলে দেখা যায় সাক্ষরটি তার স্ত্রীর নয় তা প্রতারক জিসানের।এতে আমাদের আরও শঙ্কায় ফেলে দেয়।তার দেওয়া চেকে উল্লেখিত সময় অনুযায়ী চেকখানা নগদায়ন করার জন্য ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, চট্টগ্রাম মেডিকেল শাখায় নগদায়ন করার লক্ষ্য ব্যাংকে নিয়ে গেলে গত ৮/১১/২১ ব্যাংক হতে রশিদমূলে তার প্রদত্ত সকল চেকসমূহ ব্যাংক কর্তৃক ডিজঅনার করে ফেরত দেয়।
জিসানের প্রতারণার শিকার মাহমুদুল করিম আরও জানান, চেক ডিজঅনার হলে আমরা চট্টগ্রাম জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মনজুর আলমের শরণাপন্ন হলে তিনি নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধের জন্য অভিযুক্ত জিসান নাজিরের বর্তমান ঠিকানা বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান তাতে উল্লেখ করা হয়,
আগামী এক মাসের মধ্য টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোটিশখানি রেজিঃডাক মারফত পাঠালেও অভিযুক্ত জিসান নাজির তা রিসিভ না করে ফেরত পাঠান।
এবিষয়ে জানতে জিসান নাজিরের মোবাইলে কল দিলে প্রতিবেদককে নোটিশ রিসিভ না করার কথা স্বীকার করেন।অভিযোগকারীদের নিকট টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ভুক্তভোগীদের দেওয়া চেকে উল্লেখিত টাকার পরিমাণ নিয়ে দ্বিমত পোষন করেন।তিনি সকলের টাকা অতিদ্রুত ফেরত দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রতিবেদককে।
এমতাবস্থায় ভুক্তভোগীরা জিসানের এমন প্রতিশ্রুতিকে নিছক তার মিথ্যা আশ্বাস ও নতুন প্রতারণার অংশ হিসেবে উল্লেখ করে গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, তাদের টাকা না দিয়ে জিসান দিব্যি আরাম আয়েশে অভিজাত খুলশীতে ফ্ল্যাট নিয়ে জীবনযাপন করছেন।আমরা আমাদের সর্বস্ব হারােনোর শঙ্কায় পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।