বৃটিশ শাসনামলে রাউজানের পাহাড়তলীর কদলপুর ঊনসত্তরপাড়া এলাকায় খনন করা হয় লস্কর উজিরের বর্গাকার দিঘি। এটি এখন লস্কর দিঘি নামে পরিচিত। প্রায় তিন একর আয়তনের এই দিঘিতে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখি দেখতে আসছেন অনেকে। এসব পাখির কলতানে মুখরিত পুরো এলাকা।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের পর এখানে ঝাঁক বেঁধে আসতে শুরু করে পরিযায়ী চখাচখি। প্রতিদিন ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাক্ষণ কিচিরমিচির শব্দে তাদের ওড়াউড়ি মাতিয়ে রেখেছে এই দিঘিসহ আশপাশের এলাকা।
ভোরে পাখিগুলো নিজেদের পালকে মুখ লুকিয়ে পানিতে ভাসতে থাকে। আকাশে রোদের দেখা মিললেই ওরা ডানা মেলে। দিঘির পাড়ের গাছের ডালে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে পানির দিকে।
পানির উপরিভাগে উঠে আসা ছোট মাছ কিংবা পোকা মাকড় দেখলে মুহূর্তেই ঝাপটা মেনে নিয়ে নেয় নিজের দখলে। এমন দৃশ্য নজর কাড়ে সবার।
চখাচখি দেখতে হাঁসের মতো। ডানার নিচের অংশ কালো। বুক হলদে বর্ণের। উপরিভাগ লালচে ও সাদা-কালো ছোপ ছোপ। ঠোঁট ধূসর বর্ণের। চোখ লালচে।
এই পরিযায়ী পাখিরা দল বেঁধে দিঘির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দাপিয়ে বেড়ায় সারক্ষণ। পানিতে পেখমের ঝাপটায় চারিদিকে ছিটকে পড়া পানির অপরূপ দৃশ্য মন ভোলায়।
স্থানীয়রা বিকেলে এই দৃশ্য দেখতে দিঘির ঘাটে বসে সময় পার করেন। তত্ত্বাবধায়ক লোকমান জানান, এই দিঘিতে মাছ চাষ করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে এখানে পরিযায়ী পাখি আসছে।
সেই থেকে স্থানীয় প্রসাশনের নজর রয়েছে, যেন এই পরিযায়ী পাখিদের কেউ বিরক্ত বা শিকার করতে না পারে। কিছু শিক্ষার্থী মাঝে মাঝে পাখির ওড়াওড়ি দেখার জন্য ঢিল ছুঁড়ে মারে। তখন পাখিগুলো উড়ে যায় পাশের পাহাড়ে। সেখানে খাবার খেয়ে আবার ফিরে আসে।
অন্যান্য বছরে চেয়ে এবার অবশ্য পাখির সংখ্যা অনেক কমে গেছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক লোকমান।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই এই দিঘিতে শীতকালে পাখিগুলো আসে। কেউ বিরক্ত না করলে অনেকদিন থাকে। শীতকাল চলে যাওয়ার সময় পাখিগুলোও চলে যায়। ’
প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন এই প্রজাতিকে বিপদযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এছাড়া সব পরিযায়ী পাখি শিকার নিষিদ্ধ।
লস্কর উজিরের দিঘি ছাড়াও রাউজানের নোয়াপাড়া কর্তার দিঘিতে ভিড় করেছে পরিযায়ী পাখির দল।