চট্টগ্রামে ৭৫ শতাংশ করোনা রোগীর দেহে নতুন ধরন ওমিক্রন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালে গত বছরের ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে আসা করোনা রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্স করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে আগত ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনা পজিটিভ ৩০ রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। এতে দেখা যায়, ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে আসা করোনা পজিটিভ রোগীদের ৭৫ ভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার সকালে সার্স কভ-২ এর জিনোম সিকোয়েন্সের আন্তর্জাতিক ডাটাবেস জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটায় (জিআইএসএইড) এই জিনোম সিকোয়েন্সগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
৩০ রোগীর নমুনা থেকে করা জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগত সব রোগীই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল। এর মধ্যে নবজাতক হতে ৮০ বছরের বৃদ্ধ রোগী ছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে পাওয়া ৭৫ ভাগ রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুই রোগীর শরীরে ওমিক্রনের সাম্প্রতিকতম ধরন ‘বিএ২’ বা ‘স্টেলথ ওমিক্রন’ শনাক্ত করা হয়েছে। যা জানুয়ারির শুরু থেকে ছড়িয়ে পড়ছে কয়েকটি দেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও হিউস্টন, ভারত, চীন ও ওমানে এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। নতুন ধরনটি খুব বেশি বিপজ্জনক নয় বলে জানান গবেষকরা। তবে এটির স্পাইক প্রোটিনে বেশকিছু নতুন পরিবর্তন আছে, যা এটি শনাক্তকরণকে দুরূহ করতে পারে বলে ইতোপূর্বে মন্তব্য করছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) গবেষকরা। চট্টগ্রামে এটিই প্রথম ‘বিএ২’ শনাক্তকরণের তথ্য।
গবেষকরা বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে গলা ব্যথা এবং গলার স্বর বিকৃত হয়ে যাওয়া। ৯০ ভাগ রোগীর মধ্যেই এই লক্ষণ দেখা গেছে। ৮৫ ভাগের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও মাথাব্যথা এবং ৮০ ভাগের জ্বর পরিলক্ষিত হয়েছে। ওমিক্রনে আক্রান্ত সবার বয়স ২১ বছরের ঊর্ধ্বে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এখনও তা শনাক্ত হয়নি।
ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, চট্টগ্রামের ওমিক্রনে আক্রান্তদের নিয়ে এত অল্প নমুনার বিশ্লেষণে কোনো উপসংহারে আসা সম্ভব নয় বলে মনে করি। আরও অন্তত কয়েকশ জিনোম সিকোয়েন্স করলে এর চরিত্র নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে নিয়মিতভাবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালের রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে জিনমিক সার্ভিলেন্স প্রজেক্টের আওতায়। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান।
এতে সহ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম, মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস ও ডা. নাহিদ সুলতানা এবং আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।
গবেষণা সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আছে কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অব ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ডেভিড কেলভিন ও আব্দুল্লাহ মাহমুদ আল রাফাত। সহকারী গবেষক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, ডা. মিনহাজুল হক এবং মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। সিকোয়েন্সিংয়ের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে আছেন আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা।