আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যে কারণে বাড়ছে ডিমের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৮ মে ২০২২ ০৯:৩৮:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

চাল-ডাল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়তি। এবার বাড়তি দামের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আমিষের অন্যতম উপাদান ডিম। যা নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে বিপাকে পড়া ক্রেতাদের আরও কঠিন অবস্থায় ফেলেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর প্রতিদিনের আমিষের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখে ডিম। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ডিম কেনা থেকে বিরত থাকছেন অধিকাংশ ক্রেতা।  

ক্রেতারা বলছেন, মাছ, মাংসের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নিত্যদিনের খাবারের তালিকায়  জায়গা নিয়েছিল ডিম। কিন্তু সেই ডিমের দামও এখন আকাশ চুম্বি। ১১-১২টাকার কমে বাজারে প্রতি পিস বয়লার মুরগির ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। যা আগে ৮টাকা করে বিক্রি হতো। অর্থাৎ ৯৬ টাকা ডজনে বিক্রি হওয়া ডিম খুচরা বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা মো. জুলহাস নামে ক্রেতা বলেন, দামের কারণে তো মাছ, মাংসের বাজারে যাওয়া যায় না। এমন সময় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু এখন ডিমের দামও যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে আর কিছু দিন পর ডিমও ঘরে নেওয়া যাবে।

তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ডিমের বাজার এখনই স্থিতিশীল হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সামনে ডিমের দাম আরও বাড়তে পারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের দাম বৃদ্ধির তিনটি কারণ। প্রথমত, পোলট্রি ফিডের দাম বৃদ্ধি, হাঁস মুরগীর রানিক্ষেত রোগে প্রচুর ক্ষতি ও গ্রাম পর্যায়ে খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া।

শনিবার (২৮ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়ৎদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তেজগাঁওয়ে গত ৩০ বছর ধরে পাইকারিভাবে ডিম বিক্রি করছেন আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা ও লাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা ডজন। কিন্তু রোজার মাসের আগে এবং রোজার মাসে খুচরা বাজারে ডিম বিক্রি হতো ৯৬-১০০ টাকায়। আর হাঁসের ডিম ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন বড় কোম্পানি

ডিমের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারি এ ব্যবসায়ী বলেন, পোলট্রি ফিড তৈরির ৮০ শতাংশ উপাদান আমদানি করে আনতে হয়। আন্তর্জাতিক মার্কেটে এসব উপাদানের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফিডের দাম বেড়েছে। ফলে খামারিরা লোকসান থেকে বাঁচতে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। 

তিনি আরও জানান, গ্রামে ছোট ব্রয়লার মুরগির খামারগুলো লোকসানে পড়ে গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ডিমের বাজারে এখন‌ একচ্ছত্র আধিপত্য বড় বড় কোম্পানিগুলোর। তাই এদের সিন্ডিকেটের কারণেও ডিমের বাজারে অস্থিরতা।

বেশি দামে বিক্রি করে বেশি লাভ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের লাভ কমে গেছে। দাম কম থাকলে আমাদের বেশি লাভ হয়। কিন্তু দাম বাড়তি থাকলে আমাদের লাভ কম হয়। কারণ দাম বেড়ে গেলে বিক্রি কমে যায়। আর বিক্রি কম হলেই তো লাভ নেমে যায়।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়তদার মো. ইউনুস বলেন, আমাদের এখন ১০০ পিস ডিম (লাল) কিনতে হচ্ছে ৯১০-৯৫০ টাকায়। আর বিক্রি করছি ১ হাজার টাকায়, কিন্তু এক মাস আগে সাড়ে ৭০০ টাকা কিনতে পারতাম। বেশি দামে কিনে তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।

ডিমের দাম বাড়িতে কেন চানতে চাইলে তিনি বলেন, নানা কারণে বিশ্বব্যাপী ভুট্টা ও গমের দাম বেড়ে গেছে। পোলট্রি ফিড তৈরি করতে এ দুটি উপাদান লাগে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফিডের দাম বেড়েছে আর এর সরাসরি প্রভাব ডিমের দামে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগে দেখা যেত গ্রাম-গঞ্জে ছোট ছোট অসংখ্য মুরগির খামার ছিল। পোলট্রি ফিডের দামের কারণে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। গ্রামের খামার থেকে কিছু কম দামে ডিম কেনা যেত। কিন্তু এখন ব্যবসা বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চলে আসায় কম দামে আর ডিম পাওয়া যায় না।