আজ বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

মিশ্র ফল চাষে ভাগ্য ফিরেছে প্রবাসী সোহেলের

সালাহউদ্দিন জিকু, ফটিকছড়ি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩১ অগাস্ট ২০২৩ ১০:০২:০০ অপরাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

ফেনী জেলার লস্করহাটের বাসিন্দা মোঃ সোহেল। জীবিকার টানে গিয়েছিলেন প্রবাসে। দীর্ঘদিন সেখানে উন্নতি করতে না পেরে দেশে ফিরে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ, অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর ভালো লাগা থেকে শুরু করেন কৃষিকাজ। দীর্ঘ ৬ বছর কৃষিকাজ করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন। নিজে আত্মনির্ভশীল হওয়ার পাশাপাশি ১০-১২ জন লোকের কর্মসংস্থানও করেছেন।

 

সম্প্রতি ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নের বালুটিলা এলাকায় সোহেলের মিশ্র ফলের বাগান পরিদর্শন করতে গেলে কথা হয় তার সাথে। সে জানায়, প্রথমে পরীক্ষামুলক ভাবে বাগানবাজার ইউনিয়নের লালমাই এলাকায় পেঁপেসহ মিশ্র ফলের চাষ করেন তিনি। প্রাথমিক সফলতা পেলেও যোগাযোগসহ নানা পারিপার্শ্বিক কারনে সেখান থেকে চলে আসেন দাঁতমারা ইউনিয়নের বালুটিলা এলাকায়। বালুটিলার কালাকুম নামক স্থানে ২০০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন সাম্মাম, বারোমাসি তরমুজ, মালচিং পদ্ধতিতে হাইব্রিড মরিচ, পেঁপেসহ মিশ্র ফলের বিশাল ফলজ বাগান। তাঁর এই মিশ্র ফলের বাগানে রয়েছে প্রায় দুই হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পেঁপে গাছ, মালচিং পদ্ধতির হাইব্রিড মরিচ, অন্তত দুই শতাধিক বারোমাসি তরমুজ, প্রায় চার শতাধিক সাম্মাম গাছ।

 

বালুটিলা জিলতলী সড়কের পাশে তাঁর বহুজাতিক মিশ্র ফলের বাগানে প্রবেশ করলে মন জুড়িয়ে যাবে যে কারো। বারোমাসি তরমুজ ও মরু অঞ্চলের ফল সাম্মাম চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। নতুন জাতের বিদেশি ফল দেখতে ও এটির সম্পর্কে জানতে প্রতিদিনই প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন তাঁর বাগানে। পাশাপাশি তাঁর এ উদ্যোগে অনেকেই মরু দেশের জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল সাম্মাম চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। ভিন্ন জেলার অধিবাসি হলেও তাঁর ফলজ বাগানের কারনে এ এলাকার মানুষের সাথে তাঁর গড়ে উঠেছে ভাল সখ্যতা।

 

সোহেলের মিশ্র বাগানে দেখা যায়, সারি সারি করে লাগানো হয়েছে তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীন রেড লেডি, রেডজয় ও টপলেডি জাতের পেঁপে গাছ। এসব গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ছোট-বড় পেঁপে ঝুলছে। আবার কোনো কোনো গাছে এসেছে ফুল। এছাড়া নিজেই গড়ে তুলেছেন আধুনিক পদ্ধতির চারার নার্সারি।

 

স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ সোহেল আলাপচারিতায় বলেন, ৯ বছর ওমানে প্রবাস জীবন কাটিয়েও পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারেননি তিনি। বর্তমানে তাঁর মিশ্র ফলের বাগানে যে শ্রম দিচ্ছেন তিনি তার চারগুন শ্রম দিয়েও মাস শেষে ঠিকভাবে বেতনও পাননি। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে দেশে এসে মনোযোগ দিলেন কৃষিতে। ইউটিউবে মিশ্র ফলের বাগান চাষের প্রক্রিয়া দেখেই এ কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। প্রথম ধাপে তেমন সাফল্য না আসলেও এখন তিনি তাঁর বাগান নিয়ে বেশ উৎফুল্ল বলে জানান। বাগানের ফলন দেখে খুশি তাঁর মা ও স্ত্রী। দুইশ শতক জমিতে পেঁপে, মরিচ, তরমুজ আর সাম্মামে মোট ৭ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন তিনি। এর মধ্যে পেঁপে বিক্রি করে ইতোমধ্যে আড়াই লাখ টাকা পেয়েছেন। সিজন শেষে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা প্রকাশ করছেন তিনি। শুধু পেঁপে বিক্রি থেকে আসবে প্রায় ৯ লাখ টাকা। বাকীটা তরমুজ, সাম্মাম এবং মরিচ বিক্রি করে আসবে। 

 

এসব ফলজ বাগান করতে গিয়ে বিগত চার বছরে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে জানিয়ে সোহেল বলেন, আগের চেয়ে অনেক ভাল আছেন তিনি। আগে পরের অধীনে ছিলেন ঠিকমত বেতনও পেতেননা। এখন তিনি নিজেই তাঁর বাগানে ১০/১৫ জন শ্রমিক খাটান। আমাদের দেশের মাটি অনেক উর্বর জানিয়ে সোহেল বলেন, পরিকল্পিতভাবে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরন করে বেলে মাটিতে সাম্মাম চাষ করলে ফলন ভাল হবে। এ ছাড়া দোঁয়াশ মাটিতে বারোমাসি তরমুজের ফলন হবে ভাল।  বিভিন্ন সময় কৃষি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ গুলোতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি অনলাইন থেকে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তা থেকে নিজেই রিসার্চ করেন।  তবে এ বিশাল ফলজ বাগান করতে গিয়ে কোন ধরনের সরকারী সহায়তা পায়নি বলেও জানান সোহেল। তিনি বলেন, দুইশ শতক মিশ্র ফলের বিশাল বাগানের বিনিয়োগ করা পুরো অর্থই নিজের এবং তাঁর ভাইয়ের। আগামী বছর পাশে আরো জমি নিয়ে নেপালি আখেঁর চাষসহ সাম্মাম এবং বারোমাসি তরমুজ চাষের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করবেন বলেও জানান তিনি। 

 

এছাড়া মালচিং পদ্ধতিতে হাইব্রিড মরিচ চাষেও এসেছে ব্যাপক সফলতা। প্রতিটি মরিচ গাছে ফলনও হয়েছে। মরচি গাছ থেকে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি। 

সোহেল বলেন, প্রবাসে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত না হয়ে আমাদের দেশের বেকার তরুন এবং যুবকরা যদি ছোট পরিসরে নিজেরা এধরনের ফলজ বাগান করে তাহলে নিজের আয় হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি হবে আত্মকর্মসংস্থানের।

 

এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, 'আমি তাঁর বাগানটি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। কৃষি অফিস থেকে তাকে বিভিন্ন ধরণের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।' 

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, প্রবাস ফেরত সোহেল একজন সফল যুবক। দেশে বেকারত্ব লাঘব ও যুবসমাজের কর্মসংস্থানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে উদাহরণ তৈরি করেছেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় কৃষিক্ষেত্রে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। কৃষি অফিস থেকে যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে।