মিরসরাইয়ে কবরে রাখার সময় কান্না করে উঠেছে একটি নবজাতক শিশু। শনিবার (১ জুন) বিকেলে মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মীর হোসেনের পুত্র মো. ইউনুস আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের পেটে ব্যাথা অনুভব ও রক্তক্ষরণ হলে তিনি
উপজেলার মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন দায়িত্বরত গাইনী চিকিৎসক শারমীন আয়েশা আল্ট্রা করার পর জানান বাচ্চা মারা গেছেন। পরবর্তীতে রাতে চিকিৎসক ডেলিভারির প্রস্তুতি নেন এবং রাত ৮.৪৫ মিনিটে নবজাতক ভুমিষ্ট হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি কার্টুনে করে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। জানাযা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টুন খুললে নবজাতক শিশুটি কান্না শুরু করেন। এরপর নবজাতক শিশুটিকে পুনরায় মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে ও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নবজতক শিশুটি বর্তমানে চমেক হাসপাতালের ৬ তলায় ৩২নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনার সাথে জড়িত মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকের বিচার দাবী করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
জানা গেছে, সাত মাস আগে বিয়ে হয় মো. ইউনুস আলী ও জেসমিন আক্তারের। বিয়ের একমাস পর জেসমিন গর্ভবতী হয়। আনন্দের সীমা নেই এ দম্পতির সংসারে। এরপর কয়েকবার চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়েছেন। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ্য রয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক। হটাৎ রক্তক্ষরণ হলে গত শনিবার (১ জুন) সকালে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত গাইনী চিকিৎসক শারমীন আয়েশার কাছে নিয়ে আসেন। তখন তিনি আল্ট্রা করানোর পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে আল্ট্রার রিপোর্টে বাচ্চা ভালো আছে বলে জানান চিকিৎসক। তবে রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর দূর্বলতা কাটানোর জন্য চিকিৎসক জেসমিন আক্তারকে গøুকোজ স্যালাইন দেন। এরপর তাঁর পেট ব্যাথা আরো বেড়ে যায়। বিকেলে পুনরায় আল্টা করলে রিপোর্ট ভালো নয়, নবজাতক মারা গেছে বলে জানান চিকিৎসক শারমীন আয়েশা।
মো. ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, সকালে বাচ্চা সুস্থ্য আছে বলে জানান ডা. শারমীন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যাথা শুরু হয়। পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কাটুনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে কার্টুনে করে বাচ্চাকে কাফন দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেহেতু ৫ মাস ১৯দিন বয়সী বাচ্চা পরিবার ও বাড়ির সবাই কার্টুন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টুন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালে ফোন করলে তারা বলেন, বাচ্চা পাটিতে রাখেন দেখবেন বাচ্চা মারা যাবে! তখন আমি তাদের বকাঝকা করে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রæত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চমেক হাসপাতালের ৬ তলায় ৩২ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তারা আমার বাচ্চাকে মৃত বলে ৫ মাস ১৯দিন বয়সে ডেলিভারি করে। বাচ্চা এখনো অপরিপক্ক। তারা কি ডাক্তার? নাকি অন্যকিছু। জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টুনে করে নিয়ে যেতে বলে। বেঁচে থাকলেও আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। এরজন্য ডাক্তার শারমীন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী। আমি তাদের শাস্তি দাবী করছি।
উপজেলার ৯নং মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরহাদ আনোয়ার জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে লোকজনের ভীড় দেখে ভেতরে যাই। এরপর দেখি ভুমিষ্ট হওয়া নবজাতক জীবিত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিভাবে মৃত বললো আমি বুঝতেছিনা।
এ বিষয়ে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নরমাল ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াছড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসে। এক পর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে নবজাতক বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় আমরা বলতে পারিনা। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছে দাবী করে তিনি বলেন, নবজাতক বাচ্চাটি মারা গেছে তা স্বজনদের বলা হয়নি। তাঁরা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানিনা। যদি মারা যেত তাহলে আমরা ড্রেথ সাটিফিকেট দেব, রেজিষ্ট্রারে এন্ট্রি করবো। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। নবজাতকটিকে রাতে পুনরায় হাসপাতালে আনলে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে স্বজনদের বলি।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এই ধরনের ঘটনা আমি অবগত নই। এখন শুনলাম। সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ট হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।