আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঝুঁকিতে পড়েছে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৪:৫১:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

 

# সেতুর এক্সপানশন জয়েন্টে জটিলতা চিহ্নিত

# অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শন

# দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বসানো হয়েছে গতিরোধক

পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী তৃতীয় সেতুতে (শাহ আমানত সেতু) নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেতুর ত্রুটি ও ঝুঁকি চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞরা এটি পরিদর্শন করেছেন। বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শে দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে র‌্যাম্পিং স্ট্রিপ (গতিরোধক) বসিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতুটিতে যদি বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে চট্টগ্রাম মহানগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আট উপজেলা, পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও পর্যটন জেলা কক্সবাজারের সড়কপথে যোগাযোগে ব্যাপক সমস্যা তৈরি করবে।

সেতুটির নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, সেতুর দক্ষিণ অংশের এক্সপানশন জয়েন্টে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। তবে শত বছরের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের ১২ বছর না যেতেই এই ধরনের ঝুঁকির বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি।

এ ব্যাপারে কথা হলে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, শাহ আমানত সেতুতে উঠলে সব ধরনের গাড়ির গতি বেড়ে যায়। মূলত গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গতিরোধক বসানো হয়েছে।

সেতুর প্রকৌশলগত ঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, সেতুটির আয়ুষ্কাল প্রায় একশ বছর। কিন্তু তাই বলে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে না তা কিন্তু নয়। সেতুর এক্সপানশন জয়েন্টে কিছু ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এখন এগুলো সারানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৯ এপ্রিল তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন। ওই বছরেই সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেতুটি চালুর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামে নতুন নতুন বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে বান্দরবান এবং কক্সবাজারের মতো পর্যটন শহরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, শাহ আমানত সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৫০ মিটার ও প্রস্থ ২৪ দশমিক ৪৭ মিটার। এ সেতুটি ক্যাবল স্ট্যান্ড এক্সট্রা ডোজ কংক্রিট সেতু। চারলেন, ফুটপাত ও ডিভাইডারসহ সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৮৩০ মিটার। সেতুর মোট পিলার সংখ্যা ১০টি। এরমধ্যে নদীর মাঝখানে চারটি, সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে ছয়টি। চার লেনবিশিষ্ট এ সেতুটির সংযোগ সড়কও সমান প্রশস্ত। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ করে।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের র‌্যাম্পিং স্ট্রিপে (গতিরোধক) সাদা রং দিয়ে মার্কিং করে দেওয়া হচ্ছে। আর এ গতিরোধক পার হতে সেতু থেকে নামার মুহূর্তে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারগামী যানবাহনের জটলা তৈরি হয়েছে।

এসময় বাসচালক আলী হোসেন বলেন, সেতু থেকে নামার মুহূর্তে ১০-১২টি গতিরোধক দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিবারই বাস কিংবা পণ্যবাহী ভারী যানবাহন ব্রেক কষতে থাকলে সেতুতে আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি হবে। এখন গতি থাকলেও গাড়ি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেমে যাচ্ছে। নামার মুহূর্তে গতিরোধকটিতে আরও দুর্ঘটনা বাড়বে বলে মন্তব্য এ চালকের।

বাইক চালক সাইফুল আলম বলেন, আমি কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা। আমরা নিয়মিত শহরে যাতায়াত করি। যেহেতু আগে থেকে জেনে গেছি, সেহেতু আমাদের হয়তো কোনো ঝামেলা হবে না। তবে যারা বাইরের জেলা থেকে এসে সেতু পার হবেন তারাই বেশি দুর্ঘটনায় পড়বেন।

একই কথা বলেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজীব। তিনি বলেন, শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে সেতু থেকে নামার মুহূর্তে যে গতিরোধক বসানো হয়েছে, তাতে সুবিধার চেয়ে দুর্ঘটনা বেশি হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে প্রতিদিন শত শত বাইকার মোটরসাইকেল চালিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যান। সেতুর নামার অংশে ওই গতিরোধকে বাইকারদের দুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি বেশি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, গতিরোধকগুলোর কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন বয়স্ক ও প্রসূতিরা। গতিরোধকে যেসব স্ট্রিপ বসানো হয়েছে, সেগুলোতে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি তৈরি হয়। এতে দুর্ঘটনার রোগী ও প্রসূতি মায়েদের বেশি কষ্ট হচ্ছে।

কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু (তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল বলেন, শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে গাড়ির গতি রোধ করার জন্য গতিরোধক বসানো হয়েছে। মূলত সেতুর এক্সপানশন জয়েন্টে কারিগরি জটিলতা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকে একজন বিশেষজ্ঞ এসেছেন। তিনি গত সপ্তাহে সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। মূলত বিশেষজ্ঞ টিমের পরামর্শে প্রাথমিকভাবে গতিরোধক বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ টিম কারিগরি ত্রুটি সারাতে লিখিত রিপোর্ট দেবেন। সে অনুযায়ী ওই স্থানে মেরামত করা হবে।

ত্রুটি সেরে গেলে গতিরোধক তুলে ফেলা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল বলেন, পুরো বিষয়টি প্রকৌশলগত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

 

 

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়