পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মানছেন না জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মাহামুদুল করিম ফারুকী। ডিসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বেতন ভাতাদি বন্ধ করে দেওয়ার পরও রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তে। চেয়ার ছাড়তে নারাজ
মুহাম্মদ মাহামুদুল করিম ফারুকী।
গত ২৪ জানুয়ারি মাদরাসা পরিচালনা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে একজন জেষ্ঠ্য শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। বিধি মোতাবেক সহকারী অধ্যাপক মোঃ ফরিদুল আলমের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে রয়ে গেছেন মাহামুদুল করিম ফারুকী।
দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না কেন, জানতে চাইলে মুহাম্মদ মাহামুদুল করিম ফারুকী বলেন, "ফরিদ সাহেব দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন।" তার সঙ্গে কখন বসেছেন; কেন অপারগতা প্রকাশ করেছেন, জানতে চাইলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর কল দিলে ধরেন নি। পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মাহামুদুল করিম ফারুকীর বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেন অধ্যাপক মোঃ ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, "আমাকে ডেকেছেন। কিন্তু ২৫ জানুয়ারি মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষায় রেখেও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। এটি একটি বাহানা। আমি বিধি মোতাবেক দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।"
২৪ জানুয়ারি পরিচালনা কমিটির বৈঠকে সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মাহামুদুল করিম ফারুকী, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন, সদস্য এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, জাফরুল্লাহ নূরী, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, অভিভাবক কাজি সাইফুল্লাহ, আবুল মনসুর, শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ আজম, মাওলানা আব্দুর রহিমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় তাকে সরিয়ে নতুন একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে জেষ্ঠ্য শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মোঃ ফরিদুল আলমকে ১ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা।
মাদরাসার অভিভাবক ফোরামের সভাপতি ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ছৈয়দুল হক সিকদার নামক একজনকে পরিচালনা কমিটির শিক্ষানুরাগি সদস্য করা হয়। তা অবগত হলে লিখিত জবাব চান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসকের অভিযোগের ভিত্তিতে মাদরাসা অধিদপ্তর মুহাম্মদ মাহামুদুল করিম ফারুকীর বেতন ভাতাদি বন্ধ করে দেয়। তাছাড়া নৈতিক স্খলনের কারণে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
মুহাম্মদ মাহামুদুল করিম ফারুকী দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করছেন। অদ্যবধি পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এ নিয়ে কমিটির সদস্য, অভিভাবক ও সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এদিকে, গত বছরের ২৭ জুলাই বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পত্র দেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০ জানুয়ারী থেকে এডহক কমিটির সভাপতি হিসাবে জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। সে হিসাবে নিয়মিত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ইমকামাক/নি/জিবি/২৯৫৮/০২ ২৮/৪/২০২৩খ্রি. জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরে বিদ্যোৎসাহী পুরুষ সদস্য নির্বাচনের জন্য ৩ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ছৈয়দুল হক সিকদার নামের একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যা জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবে ছিলই না। সভাপতির অগোচরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহামুদুল হক ফারুকী এমন কর্মকান্ড করেছেন বলে জেলা প্রশাসকের চিঠিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কর্মকান্ড পক্ষপাতদুষ্ট এবং শিক্ষার পরিবেশের অন্তরায়। যা বর্তমানে অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের মাঝে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে।
তাই ছৈয়দুল হক সিকদারের মনোনয়ন বাতিল করে আসল প্রস্তাবিত চিঠি হতে মনোনয়ন প্রদান, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহামুদুল করিম ফারুকীর এমপিও বতিলসহ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসক। এর প্রেক্ষিতে তার বেতন-ভাতা বন্ধ রাখে অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদের নিকট জানতে চাইলে মুঠোফোনে বলেন, জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতি একটি গুরুতর অপরাধ। সুনির্দিষ্ট নিয়মে নির্ধারিত দপ্তরে কেউ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।