কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি জনপদ বার আউলিয়ানগর এলাকার হতদরিদ্র জাফর আলম (৬০) রাতের খাবার খেয়ে পরিবার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। শনিবার রাত ঠিক ৯ টার দিকে তার ঘরের দরজায় হাজির হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। সাথে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: এরফান উদ্দিন। বাহির থেকে ডাক দেন ঘরে কেউ আছেন। অনেকক্ষণ পর ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন বৃদ্ধা জাফর আলম। তিনি মনে করেছিলেন এতো রাতে কেউ তাকে ডাকার কথা নয়। তারপরও শীতের রাতে অনেকটায় আতঙ্ক নিয়ে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলেই সে হতবাক। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দুইজন মানুষ। হাতে রয়েছে কম্বল। জাফর আলম নরম কন্ঠে বললেন আপনারা কারা? এত রাতে আমার ঘরে।সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলে উঠলেন আমি আপনাদের চকরিয়া উপজেলার ইউএনও। আপনি রাতে শীতে কষ্ট পাচ্ছেন তাই আপনাকে শীতের কম্বল দিতে আসলাম। এর পরেই জাফর আলমের হাতে একটি কম্বল তুলে দেন ইউএনও। কম্বল পেয়ে খুশি জাফর আলম। এমন ভাবে ইউএনও তার বাড়িতে আসবেন কখনো ভাবিনি সে। হঠাৎ ইউএনওকে বাসায় পেয়ে বলছিলেন তার দিনাতিপাতের কষ্টের কথা। শুধু জাফর আলম নয়, বার আউলিয়ানগরের পাহাড়ি জনপদের অন্তত শতাধিক গরীব মানুষের বাড়ির দরজায় গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলে শীতের কম্বল তুলে দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান। একইভাবে রাত দশটার দিকে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়া এলাকার শতাধিক পরিবারের হতদরিদ্র ও গরীব মানুষের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করলেন ইউএনও ও এসিল্যান্ড এরফান উদ্দিন। জালিয়াপাড়া গ্রামে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে একটি পরিবারের বৃদ্ধ মহিলার গায়ে শীতের কম্বল জড়িয়ে দেন তিনি। রাতের আঁধারে ঘরের দরজায় শীতের কম্বল পেয়ে খুশি জালিয়াপাড়া গ্রামের গরীব মানুষ গুলো। অনুরূপভাবে রাত এগারোটার চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কসাইপাড়া এলাকায় গরীব মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে শীতের কম্বল বিতরণ করা হয়।
শৈত্যপ্রবাহ ও প্রচন্ড শীতের এই রাতে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া কম্বল সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান উপজেলার কাকারা, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার কসাইপাড়া এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে নিজের হাতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে দেন শীতার্তদের মাঝে। রাস্তার পাশে, প্রত্যন্ত গ্রামের প্রকৃত অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের খুঁজে খুঁজে কম্বল দেন তিনি। এ সময় তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন। এবং যাদের বেশি প্রয়োজন এমন গরিব দুস্থদের হাতে কম্বল তুলে দেয়া হয়। তীব্র শীতের মধ্যে কখনও এসব গ্রামে হেঁটে যান আবার কিছুদূর গাড়িতে যান ইউএনও। কম্বল পেয়ে খুশি কসাইপাড়া এলাকার বৃদ্ধ রহিমা খাতুন।
তিনি বলেন, এই শীতে কেউ কোনো খোঁজ না নিলেও ইউএনও নিজে এসে কম্বল দিয়েছেন। কম্বল পেয়ে আমি অনেক খুশি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আতিকুর রহমান বলেন, উপজেলার জন্য সরকারি ভাবে ১১শত শীতের কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে গরীব মানুষের ঘরে গিয়ে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের হতদরিদ্র নারী-পুরুষের মাঝে এই কম্বল দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এভাবেই খুঁজে খুঁজে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীতের কম্বল বিতরন করবো।
তিনি বলেন, শীতের সময় আর্থিক নানা অসঙ্গতির কারণে গরিব, দুঃখী মানুষ গুলো শীত নিবারণ করতে পারেনা। তাই দরিদ্র পরিবারের বাড়ি বাড়ি ঘুরে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলার বেশকিছু এতিমখানায়ও শীতের কম্বল দেওয়া হবে। আমরা মনে করি, সরকারের পাশাপাশি এই শীতে এসব অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্র পাশে বিত্তবান সবাইকে এসে দাঁড়ানো উচিত।
শীতের কম্বল বিতরণ কালে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বিভাগের প্রকৌশলী শেখ আবদুল্লাহ মামুন, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ভুমি সহকারী তহসিলদার মোহাম্মদ আবুল মনছুর ও স্থানীয় সাংবাদিক এবং উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ।