আজ সোমবার ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১

হাটহাজারীতে পুকুরে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, হাটহাজারী : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৯ জুন ২০২৪ ০৬:৩৫:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর

হাটহাজারী উপজেলায় পরিবেশ আইন অমান্য করে  অভিনব কায়দায়  পুকুরের মাঝখানে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি বহুতল ভবন। 

 

উপজেলার ৮ নং মেখল ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়াডস্থ বাদামতল এলাকার ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশে বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতর পুকুরের মাঝখানে নিয়ম বর্হিভুতভাবে ভবনটি নির্মাণ করছেন ওই এলাকার প্রবাসী সাইফুল।

 

জানা যায়, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। এছাড়া জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারা মতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণিও পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু তিনি এসব আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। 

 

চট্টগ্রাম জলাশয়-জলাধার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট রেহানা বেগম রানু বলেন, ‘জলাশয়-জলাধারগুলো রক্ষা করতে হবে আমাদের প্রয়োজনে। সাময়িক লাভের কথা চিন্তা করে আমরা জলাশয়-জলাধার ভরাট করে ফেলি। সরকারের উচিৎ জলাশয়গুলো অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ করা।

 

পুকুরের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘পুকুর ভরাট হলে ভবিষ্যতে পানির সংকট তৈরি হবে। আমরা ২০ ভাগ পানি পান করি আর ৮০ ভাগ ব্যবহার করি। কাজেই ব্যবহারের পানির অন্যতম উৎস হলো পুকুর।

 

‘শুধু তাই নয়, কোনো একটি এলাকায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস এসে পৌঁছাতে সময় লাগে। এসময় আগুন নেভাতে দ্রুত পুকুরের পানি ব্যবহার করা যায়। বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির পানি জলাশয়-জলাধারে জমা হয়। ফলে মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচে। অন্যদিকে পুকুরে স্থাপনা-ভবন নির্মাণ করা হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কেননা এসব ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম মানা হয় না।

 

স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এ রোড়টা এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে যাবার পথ হওয়ায় প্রায় সময় উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের লোকজন  এ পথেই আসা যাওয়া করেন। কিন্তু অজানা কারনে দায়িত্বশীল কারোরই এতো বড় পরিবেশ বিরুধী কাজটা চোঁখেই পড়েনা। আমরা এ ব্যাপারে দ্রুত যথাযত কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

পুকুরের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণকারী প্রবাসী সাইফুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ইউপি পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েছেন। 

 

তবে ৮নং মেখল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, 'আমি কাউকে পুকুরে বা পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন তৈরী করার কোনো অনুমতি দিনাই। 

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনি খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।