আজ বৃহস্পতিবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এবারও লবণের বাড়তি দামে চামড়ায় অস্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৭ জুলাই ২০২২ ১১:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। দেশের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। এরপরও রোজার পর থেকে দফায় দফায় বেড়েছে মোটাদানার লবণের দাম। ঈদ কেন্দ্র করে যা আরও বাড়ছে। যদিও মিল মালিকদের দাবি, দেশে লবণের ঘাটতি আছে। আর চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, কোরবানি ঈদে পশুর চামড়ার দামে বাড়িত দাম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে তথ্য বলছে, এখনো দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টন লবণ মজুত রয়েছে। পাশাপাশি আমদানির অপেক্ষায় দেড় লাখ টন লবণ। যেখানে আসন্ন ঈদে পশুর চামড়ার জন্য প্রয়োজন হবে ৫৫ থেকে ৫৬ হাজার টন।

সেই বিবেচনায় আসন্ন কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের সংকট হওয়ার কথা নয়। তারপরও বাজারে বেড়েছে দাম। পরিস্থিতি সমাল দিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর লবণের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারাকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, কারও বিরুদ্ধে দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হলে মামলা, জরিমানার পাশাপাশি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য বলছে, আবহাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার দেশে লবণের উৎপাদন সন্তোষজনক। ২০২১-২২ মৌসুমে লবণের মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন, যা বিসিক লবণ উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে (৬১ বছর) রেকর্ড। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল।

এ হিসাবে দেশে এখন মজুত লবণের পরিমাণ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টনের মতো।

এ পরিস্থিতিতেও বাজারে এখন মোটাদানার লবণের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১৫০ থেকে ২শ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১শ টাকায়। এছাড়া নিম্নমানের অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি (৬০ কেজি) ৮৭০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ২শ থেকে ৩শ টাকা কম ছিল।

কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কোরবানির ঈদে চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের প্রচুর প্রয়োজন হয়। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা আগে থেকে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল রেখেছে। হুট করে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বর্গফুট চামড়ার প্রক্রিয়াকরণ খরচ ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগে ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে ছিল। এর মধ্যে বেড়েছে কিছু কেমিক্যালের দামও।

শুভ লেদারের স্বত্বাধিকারী আব্দুল জব্বার সবুজ বলেন, প্রতিটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে গড়ে ৮ কেজি লবণ লাগে। বড় হলে ১০ কেজির বেশি লবণও দরকার হয়। লবণের দাম বাড়ায় এখন প্রতিটি চামড়ায় ২শ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ কারণে আসন্ন ঈদে আড়তদাররা বেশি দামে চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাবেন না। কারণ তাদের বেশি খরচ করে সংরক্ষণ করতে হবে।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, প্রয়োজন বিবেচনা করে লবণ ব্যবসায়ীরা আগে থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বরং এবছর দাম কমার কথা ছিল। কোরবানির সময় লবণের সংকট এর আগেও হয়েছে। এটা অনৈতিক।

এদিকে লবণের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন ব্যয় ও কক্সবাজারের লবণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের পাশাপাশি বাজারে চাহিদার তুলনায় লবণ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এছাড়া সরকার লবণ আমদানি বন্ধ রেখেছে। যে কারণে সংকট বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও পূবালী সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী পরিতোষ কান্তি সাহাবলেন, দেশে বর্তমানে লবণের চাহিদা ৩০ লাখ টন। কিন্তু সরকার ২৩ লাখ টন বলছে। সে হিসেবে সব হিসাব হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ঘাটতি রয়েছে। শুধু মোটা লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে। সেটা আমদানি হলে কমে যাবে।