দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সীমাহীন সংকটে ফেলেছে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে। এসব মানুষ সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক ঘিরে স্বস্তি খুঁজছে। কিন্তু কখনও শ্রমসময় ব্যয় করে নিষ্ফল চেষ্টায়ও ভাঙা মন নিয়ে ফিরতে হয় নগরের অভাবীদের।
শনিবার (১২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে কমলাপুরের শাহজাহানপুর কলোনি টিসিবির ট্রাক ঘিরে দেখা গেছে নিত্যপণ্যের দামের প্রেষণে পিষ্ট শত শত মানুষ। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে তারা। পুরুষের তুলনায় নারীদের লাইন দীর্ঘ।
লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে শঙ্কা- তারা পাবেন তো তেল, ডাল, পেঁয়াজ ও চিনি। নাকি খালি হাতেই ফিরতে হবে। তাই সবাই যেন কিছুটা অসহিষ্ণু। বাজারে বিক্রি হওয়া দু-তিনগুণ বেশি দামের চারটি পণ্য সাশ্রয়ী দামে যে পেয়ে যান, তার মুখে থাকে বিজয়ীর হাসি।
এমনই বিজয়ী হাসি মুখে সামনে পড়লেন প্রতিবন্ধী শাহজাহান মিয়া। তিনি অন্ধ। শাহজাহান বলেন, ‘গত দুদিন লাইনে দাঁড়াইয়াও জিনিস পাইনি। মানুষ বেশি মাল কম। আইজ দুই ঘণ্টা দাঁড়াইয়া থাইক্যা পাইছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি অন্ধ তাই কাজ করতে পারি না। বাসায় দুই মাইয়্যা, এক পোলা। বাচ্চাগো মা মানুষের বাসায় কাম করে। সব জিনিসের অনেক দাম। ঠিকমতো সংসার চলে না।’
লাইনে দাঁড়ানো সুলেখা বেগম বলেন, ‘স্বামী রিকশা চালায়, সব জিনিসের দাম বেশি। সংসার চালাইতে পারে না। আমরা সরকারের কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাই না। সকাল থাইক্যা লাইনে দাঁড়াইয়া রইছি। আমার পরে আরও ১৫-২০ জন রইছে। তারপরও ত্যাল-ডাইল পামু কি না জানি না।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকেই ট্রাকের পণ্য শেষ হয়ে যায়। হইচই করে ওঠেন লাইনে থাকা মানুষ। কোনো কারণ ছাড়াই ট্রাকটির পিছু ছুটতে থাকেন নারী-পুরুষরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রাকটি অদৃশ্য হয়ে যায়।
বর্তমানে টিসিবির ট্রাক থেকে জনপ্রতি ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল ও ৩-৫ কেজি পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি লিটার তেল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬৫ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা রাখা হয়। বাজারে এই পণ্যগুলোর দাম কয়েকগুণ বেশি।