আজ রবিবার ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯শে মাঘ ১৪৩১

মিরসরাইয়ে স্ত্রী হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতার ফাঁসির দাবী

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই: | প্রকাশের সময় : শনিবার ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ০৮:২৪:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে স্ত্রী হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতার ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছে হত্যাকান্ডের শিকার রিজিয়া আক্তার আখিঁর স্বজনরা। ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম মঈন উদ্দিন। সে উপজেলার ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলা সদরে মানববন্ধনে আখিঁর স্বজনরা আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিনের ফাঁসির দাবী তুলেন। আখিঁ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার পিতা শাহ আলম বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় মঈন উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় বর্তমানে মঈন উদ্দিন জেলহাজতে রয়েছেন। 

জোরারগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, মিরসরাই উপজেলার ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়নের সাহেবদীনগর গ্রামের আজিম মিঝি বাড়ীর মৃত নুরুল হকের পুত্র মঈন উদ্দিনের সাথে ১৫ বছর পূর্বে ৯ নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর গড়িয়াইশ গ্রামের শাহ আলমের ছোট মেয়ে রিজিয়া আক্তার আখিঁ মনি (৩২) এর সামাজিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের গর্ভে জন্ম নেয় মীর রাজ আবীর নামে পুত্র সন্তান। বিয়ের পর থেকে মঈন উদ্দিন নানা অজুহাতে আখিঁকে মারধর, মানসিক নির্যাতন করাসহ কথায় কথায় গলায় ফাঁস দিয়ে মরে যাওয়ার জন্যও মানসিক চাপ সৃষ্টি করতো। এমন বিষয়কে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সালিশ-বিচারে একাধিকবার আখিঁকে মারধর না করার জন্য মঈন উদ্দিনকে বারণ করা হয়। কিন্তু মঈন উদ্দিন সংশোধন না হয়ে আখিঁকে বরাবরের মত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখতো। গত প্রায় ১০ মাস পূর্বে মঈন উদ্দিন আখিঁকে মারধর ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে সালিশ চলাকালে উপস্থিত সকলের সম্মুখে মঈন উদ্দিন আখিঁকে মারধর করে। ওই ঘটনার জের ধরে আখিঁ বাবার বাড়ীতে চলে আসে। পরবর্তীতে উভয়পক্ষের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একমাত্র পুত্র সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মঈন উদ্দিন আখিঁকে আর কখনো অত্যাচার করবেনা মর্মে উপস্থিত সকলের সামনে ওয়াদা করে পুণরায় আখিঁকে শ^শুর বাড়ীতে নিয়ে যায়। এরপরও মঈন উদ্দিন প্রায় সময় আখিঁকে মারধর করতো এবং বারবার আত্মহত্যা করে মরে যাওয়ার জন্য মানসিক চাপ প্রয়োগ করতো। সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি আখিঁর শ^শুর বাড়ীর বসতঘরে আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।

আখিঁর স্বামী মঈন উদ্দিন ইছাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইছাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম ভূঁইয়া। জড়িত ছিল না তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে শুনেছি।’

আখিঁর বোন আইরিন আক্তার বলেন, আমার খুব আদরের ছোট বোন ছিল রিজিয়া আক্তার আখিঁ। তার বিয়ের ১৫ বছর অতিবাহিত হয়। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই তার স্বামী মঈন উদ্দিন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তাকে নির্যাতন করতো। আমার বোন তার একমাত্র পুত্র সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামীর সংসারে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে সংসার করে আসছিল। অবশেষে মঈন উদ্দিন আমার বোনকে হত্যা করে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে। আমরা এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি।

আখিঁর মা আমিনা আক্তার শিউলী বলেন, আমার দুই মেয়ের মধ্যে আমার ছোট মেয়ে রিজিয়া আক্তার আখিঁ খুব আদরের ছিল। বিয়ের পরও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে সে সময় যা দরকার সবই দিয়েছি। কিন্তু আখিঁর পাষন্ড স্বামী মঈন উদ্দিন আমার মেয়েকে নানাভাবে শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। অবশেষে আমার মেয়েকে হত্যা করে তার লাশ বসতঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে। আমার মেয়েকে মঈন উদ্দিন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে আমরাও তার ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি।

আখিঁর বাবা শাহ আলম বলেন, আখিঁকে হত্যার পেছনে মঈন উদ্দিন সরাসরি জড়িত। এখন মঈন উদ্দিনের স্বজনরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রভাবিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ মঈন উদ্দিনের বোন রেহানা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি পাশাপাশি পোস্টমর্টেমের সঠিক রিপোর্ট প্রত্যাশা করছি।

আখিঁ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) হান্নান আল মামুন বলেন, আখিঁর পরিবারের দাবী আখিঁকে হত্যা করা হয়েছে। আখিঁর বাবা বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় নিয়মিত মামলা (নম্বর-৭) দায়ের করেছেন। ওই মামলায় আখিঁর স্বামী মঈন উদ্দিনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা ফরেনসিক রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।