আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিতে বাংলাদেশের ইতিহাস

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৫ অগাস্ট ২০২৪ ০৪:৪৯:০০ অপরাহ্ন | খেলাধুলা

প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ১১৩ ওভারে ৪৪৮/৬ ডিক্লে. (শাহীন ২৮*, মোহাম্মদ রিজওয়ান ১৭১*, আগা সালমান ১৯, সৌদ শাকিল ১৪১, সাইম আইয়ুব ৫৬; শফিক ২, শান মাসুদ ৬, বাবর ০)

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৬৭.৩ ওভারে ৫৬৫/১০; লিড ১১৭ (নাহিদ ১*, জাকির ১২, শান্ত ১৬, মুমিনুল ৫০, সাদমান ৯৩, সাকিব ১৫, লিটন ৫৬, মুশফিক ১৯১, মিরাজ ৭৭, শরিফুল ২২)

 

দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ৫৪ ওভারে ১৪৬/১০, লিড ২৯ রান ( শাহজাদ ৫*; সাইম ১, মাসুদ ১৪, বাবর ২২, সৌদ শাকিল ০, শফিক ৩৭, সালমান ০, শাহীন ২, নাসিম ৩, রিজওয়ান ৫১, মোহাম্মদ আলী ০) 

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ৬.৩ ওভারে ৩০/০, লক্ষ্য ৩০ (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*)

 

ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী। 

ম্যাচসেরা: মুশফিকুর রহিম। 

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে জয়ের নজির ছিল না বাংলাদেশের। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মাটিতে মুলতানে সেই মুহূর্ত তৈরি হলেও দীর্ঘশ্বাস নিয়েই লাল-সবুজরা মাঠ ছেড়েছে। ২০২৪ সালে এসে হলো অসাধ্য সাধন। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম কোনও টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়েছে শান্তর দল। শুধু কি তাই? বাংলাদেশই প্রথম দল যারা পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে ১০ উইকেটে হারানোর নজির গড়েছে।     

বিদেশের মাটিতে এমনিতেও জয়ের খুব বেশি নজির বাংলাদেশের নেই। তাছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ১৩ টেস্টের ১২টিতেই হার ছিল সঙ্গী। সিলেটে ২০১৫ একমাত্র টেস্টটি ড্র হয়েছিল। 

ঐতিহাসিক এই টেস্ট জিততে বড় ভূমিকা রেখেছে মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের অনবদ্য ইনিংস। তার ব্যাটিংয়েই প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে ৫৬৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। লিড দাঁড়ায় ১১৭ রানের। পাকিস্তান ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ে দাঁড়াতেই পারেনি। ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরুর পর ১৪৬ রানে থেমেছে দলটির ইনিংস। বাংলাদেশও পায় মাত্র ৩০ রানের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য ৬.৩ ওভারে বিনা উইকেটে তাড়া করেছেন জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম।        

ঐতিহাসিক টেস্ট জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩০ রান

রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ১৪৬ রানে অলআউট করেছে সফরকারীরা। নবম উইকেট হিসেবে রিজওয়ানের আউটের পর মোহাম্মদ আলীকে মিরাজ এলবিডাব্লিউ করলে বেশি দূর যায়নি স্বাগতিকদের ইনিংস। লিড পেয়েছে মাত্র ২৯ রানের। তাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ৩০ রান। তাদের হাতে আছে দেড় সেশনের মতো। 

পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিতে মূল অবদান রাখেন সাকিব আল হাসান। তিনটি উইকেট নিয়ে ধস নামাতে মূল অবদান রেখেছেন তিনিই। বাকি কাজটা করেছেন মিরাজ। সাকিব ৪৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সাকিব ২১ রানে নিয়েছেন ৪টি। একটি করে নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।   

 

অবশেষে রিজওয়নকে বিদায় দিলেন মিরাজ

একপ্রান্ত নড়বড়ে হয়ে পড়লেও একপ্রান্ত আগলে প্রতিরোধ গড়ে খেলছিলেন রিজওয়ান। তার ব্যাটে করেই দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান লিড পেয়েছে। খুররাম শেহজাদকে নিয়ে নবম উইকেটে ২৪ রান যোগ করে বাংলাদেশের জয়ের পথে কাঁটা তৈরি করছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৫৩.৪ ওভারে রিজওয়ানকে বোল্ড করেছেন মিরাজ। তার আগে অবশ্য পাকিস্তানি ব্যাটার ফিফটি তুলে নিয়েছেন। ৮০ বলে আউট হয়েছেন ৫১ রানে। 

 

আম্পায়ার্স কলে বাঁচলেন রিজওয়ান

 

৪৩.২ ওভারে আম্পায়ার্স কলে বেঁচেছেন রিজওয়ান। তাহলে আগেভাগেই পাকিস্তানকে গুটিয়ে ফেলা সম্ভব হতো। মিরাজের বল ভীষণভাবে টার্ন করেছিল। রিজওয়ান বামে সরলেও বল খেলার চেষ্টা করেননি। বাংলাদেশ লেগ বিফোরের আবেদন করলে আম্পায়ার সাড়া দেননি তাতে। পরে দেখা যায়, রিভিউতে বল স্টাম্পে আঘাত করলেও আম্পায়ার্স কলে রক্ষা পেয়েছেন রিজওয়ান। তখন ২৮ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি।  

 

 

ধীরে ধীরে জয়ের কাছেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান এক রানের লিড পেলেও তার পরেই সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে ফিরেছেন নাসিম শাহ। মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন পাকিস্তানি পেসার। সাকিবের এটি তৃতীয় শিকার। তাতে পড়েছে অষ্টম উইকেট। অপরপ্রান্ত অবশ্য রিজওয়ান আগলে রয়েছেন।    

 

লাঞ্চ থেকে ফিরেই মিরাজের আঘাতে পড়লো সপ্তম উইকেট

 

জয়ের লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। লাঞ্চ থেকে ফিরেই দ্বিতীয় ওভারে তুলে নিয়েছে সপ্তম উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে এলবিডাব্লিউ হয়েছেন শাহীন আফ্রিদি। পাকিস্তানি পেসার ২ রানে ফিরেছেন।  

 

লাঞ্চের আগেই পাকিস্তানকে এলোমেলো করে দিয়েছে বাংলাদেশ

 

পঞ্চম দিনে লাঞ্চ বিরতির আগেই পাকিস্তানকে এলো মেলো করে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম এই সেশনে নিয়েছে ৫ উইকেট। তাতে জয়ের আশা নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করেছে সফরকারী দল।

 

জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়া। শুরুতেই অধিনায়ক শান মাসুদকে বিদায় দিয়ে সেই চাওয়া পূরণ করেন হাসান মাহমুদ। শুরুর ধাক্কার পর বাবর আজম-আব্দুল্লাহ শফিক মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই প্রতিরোধ স্থায়ী হতে দেননি নাহিদ রানা। বাবরকে আজমকে বোল্ড করেন তিনি। পরের ওভারে সৌদ শাকিলের উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে ধস নামান সাকিব আল হাসান। 

 

বিরতির আগে সাকিব আবারও আঘাত হানলে এবার ফেরেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক (৩৭)! কঠিন বিপদে পড়লে সেখান থেকে আগা সালমানও উদ্ধার করতে পারেননি। বরং বিপদ আরও বাড়িয়ে গেছেন। মিরাজ দ্রুত সময়ে সালমানকেও বিদায় দিলে ১০৫ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। এখনও স্বাগতিকরা ৯ রানে পিছিয়ে। প্রথম সেশনের বিরতিতে যাওয়ার আগে তাদের স্কোর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১০৮ রান। ক্রিজে আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান (২২) ও শাহীন আফ্রিদি (১)। 

 

নাহিদের পর সাকিবের আঘাতে আরও বিপদে পাকিস্তান

 

শেষ দিন দ্রুত উইকেট তুলে পাকিস্তানকে কঠিন বিপদে করে ফেলার লক্ষ্যে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। লাঞ্চ বিরতির আগেই তুলে নিয়েছে পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেট। আগের ওভারে নাহিদ রানার আঘাতের পর এবার আঘাত হেনেছেন সাকিব আল হাসান। নতুন নামা সৌদ শাকিলকে শূন্যতে স্টাম্পড করিয়েছেন তিনি। তাতে পাকিস্তান ৬৭ রানে হারিয়েছে ৪ উইকেট। তখনও পাকিস্তান পিছিয়ে ছিল ৫০ রানে। সাকিবের ঘূর্ণি বল এগিয়ে খেলতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনেন শাকিল।   

 

 

শূন্য রানেই ফিরতে পারতেন বাবর আজম। তাহলে পাকিস্তানকে আরও চেপে ধরার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু লিটন দাস শরিফুলের বলে আসা ক্যাচ গ্লাভসে জমাতে পারেননি। তাতে আব্দুল্লাহ শফিককে নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে খেলতে থাকেন বাবর। ৩৮ রান যোগও করেন তারা। এই জুটিকে অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি পেসার নাহিদ রানা। তার অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে বাবর আজম বোল্ড হয়েছেন। তাতে পাকিস্তানি ব্যাটার ৫০ বলে ২২ রানে থেমেছেন।   

 

শান মাসুদকে ফেরানোর পর বাবরের ক্যাচ ছাড়লেন লিটন

 

শান মাসুদকে ফেরানোর পরের ওভারে শরিফুলের বলে আরও একটি উইকেট তুলে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা হলে পাকিস্তানকে আরও চেপে ধরা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য নতুন নামা বাবর আজমের ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল লিটন গ্লাভসেই জমাতে পারেননি। বাবরের তখন রান ছিল শূন্য।  

 

দিনের শুরুতেই বাংলাদেশের সাফল্য

 

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রানের পাহাড়ের পর দ্বিতীয় ইনিংস চাপে থেকে শুরু করেছে পাকিস্তান। গতকাল ৫ রানে হারায় প্রথম উইকেট। শেষ দিন সকালে বাংলাদেশ দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়ার আশাতেই ছিল। লক্ষ্য স্বাগতিকদের চাপে ফেলা। দ্বিতীয় ওভারে সেটা সম্ভবও করে ছাড়েন পেসার হাসান মাহমুদ। অধিনায়ক শান মাসুদকে কিপারের গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন। শুরুতে অবশ্য আম্পায়ার সাড়া দেননি। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটের কানায় লেগে গ্লাভসে জমা পড়েছে। শান মাসুদ ফেরার আগে ১৪ রান করেছেন।    

 

ভালো কিছুর আশায় শেষ দিন শুরু বাংলাদেশের

 

রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে চালকের আসনে বাংলাদেশ। ১১৭ রানের লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতেই ৫ রানে উইকেট হারিয়েছে তারা। সাইম আইয়ুবকে ফিরিয়েছেন শরিফুল। 

 

টেস্টের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের মুঠোয় আসতে সবচেয়ে বড় অবদান মুশফিকুর রহিমের। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন এবং ডাবল সেঞ্চুরি প্রায় করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু ৯ রান দূরে থাকতে আউট হন তিনি।

 

এর আগে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন তিনি। দুজনে যখন ক্রিজে জুটি বাঁধেন, তখনও বাংলাদেশ ১১৬ রানে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু তারা যোগ করেন ১৯৬ রান। মোহাম্মদ আলী জুটিটা ভেঙে দেন। তারপর শাহীন শাহ আফ্রিদি জোড়া আঘাত করেন এবং শেষটা করেন নাসিম শাহ।

 

দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিং জুটি ভাঙার পরও পাকিস্তানের দুই ব্যাটার অধিনায়ক শান মাসুদ ও আব্দুল্লাহ শফিকের পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশের পেসাররা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তারা চতুর্থ দিন বিপদ ছাড়াই পার করেছেন। 

 

পঞ্চম দিন রোমাঞ্চকর কিছুর আশায় শেষ দিনের খেলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ৯ উইকেট হাতে রেখে ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে দিন শুরু করেছে। 

 

এর আগে পাকিস্তানের ৪৪৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানে অলআউট হয়।