আজ মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

নতুনের কেতন উড়ছে ক্রিকেটে

ক্রীড়া ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১ জানুয়ারী ২০২২ ০৩:৩৮:০০ অপরাহ্ন | খেলাধুলা

২০২১ সালে হারের বৃত্তে ব্র্যাকেট-বন্দি ছিলেন সাকিব-মুশফিকরা। গতবছরের শুরুর একেকটি পরাজয় যেন বছর শেষে ব্যর্থতার মহাকাব্যে রূপ নিয়েছিল। নতুন বছরে সেই বৃত্ত ভাঙতে বদলাতে হবে অনেক কিছু।

২০২১ সালে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। নতুন বছরেও ব্যস্ত সূচির অপেক্ষায় তামিম-সাকিবরা। এবার সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। বিদেশের মাটিতে সামর্থ্যের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে ২০২২ সালেই। বছরের প্রথম দিনই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল।

নতুন বছরে দেশের বাইরে ৫টি সফর আছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। পাশাপাশি দুটি বড় ইভেন্টও আছে। একটি শ্রীলঙ্কাতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপ, অন্যটি অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এ ছাড়া ঘরের মাটিতে ভারত, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতো আছেই। সব মিলিয়ে নতুন বছরে কঠিন পরীক্ষাতেই পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল।

তবে পুরনো হতাশা কাটিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ভালো করবে বলেই আশার নতুন বসতি গড়েছেন ক্রিকেটপ্রেমী ও ক্রিকেটের কর্তারা।

নির্বাচক হাবিবুল বাশার যেমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘নানা কারণেই ২০২১ সালে আমরা ভালো করতে পারিনি। নতুন বছরে সব ঠিকমতো হবে বলে মনে করি। ২০২১ সালে আমরা অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের একসঙ্গে পাইনি। নিউজিল্যান্ড সিরিজে তামিম-সাকিবকে পাচ্ছি না। পরের সিরিজগুলো থেকে তারা যুক্ত হবেন। ফলে পারফেক্ট একটা টিম কম্বিনেশন দাঁড়িয়ে যাবে।’

নিজেদের কন্ডিশনে কিছুটা সাফল্য পেলেও বাইরের কন্ডিশনে বরাবরই ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বকাপে গিয়ে ভরাডুবিতেই পড়তে হয়েছে সাকিব-মুশফিকদের।

তাহলে কি ঘরের মাঠের উইকেটই দায়ী? নির্বাচক বাশার অবশ্য সব দায় উইকেটের দিলেন না। পুরনো হিসেব বাদ দিয়ে তিনি সামনে তাকিয়ে বলেন, ‘সিলেটের উইকেট এই মুহূর্তে অনেক ভালো। রাজশাহীর উইকেটও ভালো। চট্টগ্রাম বরাবরই ফ্লাট উইকেট। সব মিলিয়ে উইকেটের উন্নতি হচ্ছে। তবে হুট করে সব বদলে যাবে না। ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।’

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর কোচিং স্টাফে বদল এসেছে। নিউজিল্যান্ড সফর শেষে নতুন আরও কিছু আসবে। টিম ম্যানেজমেন্টেও পরিবর্তন এসেছে। শুধু তাই নয়, জাতীয় দলে পরিচালনা কমিটিও বদলে গেছে। সব মিলিয়ে নতুন বছরে নতুন সব নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ দেখা দেবে।

টানা ছয় বছর ধরে ক্রিকেটে পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন আকরাম খান। এক সপ্তাহ আগে ক্রিকেট পরিচালনায় নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জালাল ইউনুসকে। ইতোমধ্যে ব্যাটিং কোচ হিসেবে জেমি সিডন্সকেও নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। আফগানিস্তান সিরিজের আগেই বাংলাদেশে এসে দায়িত্ব বুঝে নেবেন বাংলাদেশের সাবেক এই কোচ।

ফিল্ডিং কোচ, জাতীয় দলের ট্রেনারও পাল্টে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। এমনকি ক্রিকেট অফিসে নতুন ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তামিম ইকবালের বড় ভাই নাফিস ইকবালকে। সব মিলিয়ে বেশ বড়সড় বদলের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে দেশের ক্রিকেট। নতুন বছরে নতুন ক্রিকেটার, নতুন সেটআপ নিয়ে কতটা ভালো করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

১৯৯৬ সালে বোর্ডে আসার পর থেকে বিভিন্ন মেয়াদে স্থায়ী কমিটিতে সব সময়ই মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন জালাল ইউনুস। নতুন দায়িত্ব নিয়ে ক্রিকেটের উন্নতিতে বেশ কিছু ভূমিকা রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ বলতে অবশ্যই চাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতি। পারফরম্যান্সেই নজর দিতে হবে। একটা বছর খারাপ যেতেই পারে। ইনশা আল্লাহ সামনেই আবার ভালো দিন আসবে।’

 

শুধু জাতীয় দল নয়, জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের কীভাবে উন্নতি করা যায় সেই বিষয়েও কাজ করতে চান জালাল ইউনুস।

অনেক দিন ধরেই ‘এ’ দলের কার্যক্রম থমকে আছে। নতুন দায়িত্ব নেওয়া জালাল ইউনুস এখানেও কাজ করতে উদগ্রীব। ‘এ দলের কার্যক্রম থমকে আছে, কারণ, করোনা মহামারি। আমি দেখেছি, আগে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ অনেক চেষ্টা করেছে। অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। হয়তো তারা সূচি দিয়েছিল। কিন্তু পরে আবার বাতিলও করে দিচ্ছিল। বাংলাদেশ টাইগার্স আছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেও যদি কোনও সফর করতে পারি, এখানে ‘এ’ দলের খেলোয়াড় থাকতে পারে। একাডেমির খেলোয়াড় বা হাই পারফরম্যান্সের খেলোয়াড়ও থাকতে পারে। যে নামেই হোক, খেলোয়াড় তো একই।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। বিশেষ দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে মাঠে আম্পায়াররা পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ আছে। এ কারণেই ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য পারফেক্ট প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারে না বলে মনে করেন অনেক সাবেক ক্রিকেটার।

নতুন বছরের কয়েকদিন আগে আম্পায়ার্স কমিটির দায়িত্ব নেওয়া ইফতেখার রহমান মিঠু বলেছেন, ‘অবশ্যই আম্পায়ারিংয়ে মান বাড়ানো নিয়ে যা যা করা দরকার করবো। আমি মাত্রই দায়িত্ব নিয়েছি। সবার সঙ্গে কথা বলবো। আশা করি আম্পায়ারদের মান বাড়াতে পারলে এ ধরনের অভিযোগ আর থাকবে না।’

এদিকে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও নতুন শুরুর কথা বলেছেন। ‘বিশ্বকাপ আমাদের জন্য বড় একটি ইভেন্ট ছিল। কিন্তু ভালো করতে পারিনি। সেদিক থেকে হতাশার বছর গেলো। কিন্তু এমনটা আগেও হয়েছে। পরে ভালোভাবে কামব্যাক করেছি। আশা করছি নতুন বছরেও কামব্যাক করবো।’