১৫ ই ডিসেম্বর শনিবার চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির উদ্যােগে সমিতির সভাপতি এড. এনামুল হকের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়াউদ্দিনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালী যুক্ত ছিলেন, আইন মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক,শিক্ষা উপ মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল,এটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন। বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান, বার কাউন্সিল এডহক কমিটির সদস্য মো. মুজিবুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম, প্রমুখ। এছাড়া কার্যনির্বাহী পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি আলী আশরাফ চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক এস.এম. অহিদুল্লাহ, পাঠাগার সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মাহমুদ-উল আলম চৌধুরী (মারুফ), নির্বাহী সদস্য যথাক্রমে ফাতেমা নার্গিছ হেলনা, মারুফ মোঃ নাজেবুল আলম, এস এম আরমান মহিউদ্দিন, আবু নাসের রায়হান, সাহেদা বেগম, খায়রুন নেছা, জোহরা সুলতানা (মুনিয়া), নুর কামাল, মোঃ সরোয়ার হোসাইন (লাভলু), মোমেনুর রহমানসহঅতিথি হিসেবে আরোও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিচারক ও সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক সাফায়েত সুলতানা রুমী, সিনিয়র আইনজীবী আবদুন নুর দুলাল এবং আইনজীবী নেতৃবৃন্দ। দিনব্যাপী মিলনমেলা অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সমিতির সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ মনজুরুল আজম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন শিল্পী সন্দীপন দাশ ও অন্যান্য অতিথি শিল্পীবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক এ.এইচ.এম. জিয়াউদ্দিন তাঁর কার্যকালীন সময়ে কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরেন। নবীনদের পদচারনায় আদালত অঙ্গন আজ মুখরিত। এমতাবস্থায় আইনজীবী সমিতির কাজের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনজীবীদের পেশাগত কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে চেম্বার সংকট নিরসনে তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন। জেলা প্রশাসক কর্তৃক সৌন্দর্য বর্ধনের নামে পুরাতন আদালত ভবনের সম্মুখে চলাচলে যে প্রতিবন্ধকতা তা অচিরেই অপসারনের জন্য আমরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবরে পত্র প্রেরণ করেছি। চেম্বার সংকট নিরসনে নির্বাচনের পূর্বেই আমরা নতুন ভবন নির্মানের কাজ শুরু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি এবং সৃষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সম্পূর্ণ বৈধ প্রক্রিয়ায় আমরা চেম্বারের কাজ শুরু করব। আমার ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। আইনজীবীদের মান মর্যাদা রক্ষায় কোন আপোষ হবে না। জেলা প্রশাসন কর্তৃক সৌন্দর্যবর্ধনের নামে দখলদারিত্বের আলোকে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত ও পূর্ব পরিকল্পিতভাবে চলাচলের রাস্তা সরু করে বিচারপ্রার্থী জনগণ ও সর্বসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টির প্রতিবাদে আগামী ১৮ জানুয়ারী পুরাতন আদালত চত্ত্বরের সম্মুখে আহুত সমাবেশ সফল করার জন্য আহবান জানান। বক্তব্যের শুরুতেই সাধারণ সম্পাদক আইনমন্ত্রীর নিকট হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ দাবী করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, চলতি বছরে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা হবে। উক্ত বিষয়ে বর্তমান মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপ হয়েছে। বক্তব্যের শুরুতে আইনজীবীদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আইনজীবীরা মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। আইনজীবীদের অবদান জাতি কখনো ভুলবে না। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের প্রতি আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ৬৪টি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মান কাজ বাস্তবায়নের পথে। রাজধানী ও বন্দরনগরী শহর বাদ দিলে অন্যান্য জেলা শহরে সবচেয়ে বড় বহুতল ভবন সিজেএম আদালত ভবন। আদালতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশে লকডাউন শুরু হয় এবং আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। সেই সংকটাবস্থা কাটিয়ে আমরা ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করেছি। মামলাজট নিরসনে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আদালত বন্ধ থাকায় মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ ছিল না অপরদিকে নতুন মামলার সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রাজি হলেন। উক্ত বছরেই তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালত পরিচালনায় নির্দেশনা দিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনজীবী, বিচারকগণ এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ উক্ত আইন দ্বারা বর্তমানে উপকৃত হচ্ছেন। বর্তমানে উক্ত ভার্চুয়াল কোর্টের মাধামে আপাীল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। আইনজীবীরা পূর্বে কোন রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পেশাগত কাজ পরিচালনা করে সফল হয়েছেন কিন্তু পিছপা হননি। সরকারকে সহযোগীতা করে আইনজীবীরা উক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যে ধের্য্যর পরিচয় দিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধ পরিকর। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি উক্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে গুরত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছ। আমার দেশের বাহিরে ইতিমধ্যে বিচারকদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে অচিরেই সেখানে বিচারকদের পাশাপশি আইনজীবীদেরকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। চলতি বছরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। দায়িত্ব নিয়ে রাষ্টপক্ষে মামলা পরিচালনায় সরকারী আইন কর্মকর্তাদের বেতন প্রদানের বিষয়ে প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে। পাশাপশি মামলা প্রতি সম্মানী পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের সহিত আইনজীবী সমিতির যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে উক্ত বিষয়ে আইনজীবী সমিতি যে ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন তা সর্বমহলে প্রশংসা পেয়েছে।