দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে জোরেশোরে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ১৬ আসনে এবার সংসদ সদস্য হতে লড়তে চান ১৫১ প্রার্থী। এর মধ্যে আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত পাঁচ বছরে কোটি টাকার বাড়ির মালিক হয়েছেন উপমন্ত্রী। বেড়েছে স্থায়ী আমানত। একই সঙ্গে ঋণ বেড়ে হয়েছে ১০ গুণ।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, ওই সময়ে তার বার্ষিক আয় ছিল ৫০ লাখ ৪৫ হাজার ৩শ টাকার। ওই সময়ে তার নির্ভরশীলদের আয় ছিল বার্ষিক ৭ লাখ টাকা।
পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের হলফনামায় দেখা যায়, শিক্ষা উপমন্ত্রীর বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ৭২৮ টাকা।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে উপমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ছিল ৩০ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮২ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ছিল ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৯ টাকার। পোস্টাল সেভিংস, সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত ছিল ৩৭ লাখ টাকার, সোনা ও মূল্যবান ধাতু ছিল ৪ লাখ টাকার এবং ৫ লাখ টাকার ছিল আসবাবপত্র।
একই সময়ে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ১৫ লাখ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ১৪ লাখ টাকা। তাছাড়া ১০ লাখ টাকার সোনা ও মূল্যবান ধাতু, ১০ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ১০ লাখ টাকার আসবাবপত্র ছিল। ওই সময়ে উপমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের হলফনামায় দেখা যায়, উপমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৯৪ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কোনো টাকা জমা নেই। তবে বন্ড, ঋণপত্র এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ১০ লাখ টাকার। পাঁচ বছরের ব্যবধানে শিক্ষা উপমন্ত্রীর পোস্টাল সেভিংস, সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ৫ কোটি ৬৫ লাখ ১৭ হাজার ৪১২ টাকা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার ৪১২ টাকায়। উপমন্ত্রীর সোনা ও মূল্যবান ধাতু এবং আসবাবপত্র একই থাকলেও বেড়েছে অন্য খাতের অস্থাবর সম্পদ। এ খাতে বিনিয়োগ হিসেবে সম্পদ রয়েছে ৪২ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকার।
একই সময়ে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা বেড়ে বর্তমানে রয়েছে ২৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৯ টাকার, রয়েছে ৮ হাজার মার্কিন ডলারও। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো টাকা জমা না থাকলেও বন্ড, ঋণপত্র ও কোম্পানির শেয়ারে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৯১০ টাকার।
সোনা ও মূল্যবান ধাতু, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্রের পরিমাণ একই রয়েছে। তবে ১৭ হাজার টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বর্তমানে। পাঁচ বছর আগে উপমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে উপমন্ত্রীর ওই খাতে কৃষিজমি দেখিয়েছেন ৪ লাখ টাকার এবং এক কোটি টাকার বাড়ি। একইভাবে স্ত্রীর নামেও ৩৫ লাখ টাকার দালান দেখানো হয়েছে হলফনামায়।
হলফনামায় দেখা যায়, পাঁচ বছরে উপমন্ত্রীর ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১০ গুণ। ২০১৮ সালে ব্যাংক ঋণ ছিল ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৫ টাকার। বর্তমানে ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭২ টাকা।