আজ রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
হাসি নেই চন্দনাইশের আলু চাষীদের মুখে

৫ কেজি আলু বেচে ১ কেজি চাল

মোহাম্মদ কমরুদ্দিন, চন্দনাইশ : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৩:৩৯:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

শীতকালীন  মৌসুমে শাকসব্জীর  অন‍্যতম সবজী হলো চন্দনাইশের স্হানীয়জাত দোহাজারী জাতের গোল আলু। চলতি মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চন্দনাইশের কয়েকশত  কৃষক। অন‍্যান‍্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হলেও উৎপাদিত আলুর দরপতনে হাসি নেই আলু চাষীদের মুখে ।  কারণ, বাজারে আলুর দরপতন ঘটেছে। পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ কেজি আলু দিয়ে এক কেজি চাল। ধরণ ভেদে কোথাও আলুর কেজি ১০ টাকা,আবার কোথাও ১৫ টাকা। বাজারে নতুন আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কৃষকদের মাঝে  দুশ্চিন্তা বাড়ছে।  অন্যান্য বছরের তুলনায় গত বছরও শুরুতে আলুর মূল‍্য বেশি থাকায় অধিক লাভের আশায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা এ বছর আলু চাষে ঝুঁকে পড়ে।  কিন্তু এবছরের শুরুতেই আগাম জাতের নতুন আলুর দাম কম হওয়ায় ভরা মৌসুমে আলুর বাজার নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত।  বাজার দর নিম্নমুখী হওয়ায় অনেক কৃষক আলু পরিচর্যায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে ।  সুষ্ঠু পরিচর্যা আর অনুকূল পরিবেশের কারণে চন্দনাইশের শঙ্খ নদীর দু'পাড়সহ এ অঞ্চলে সর্বত্রই আগাম জাতের আলুর ফলন ভালো  হয়।  আলু চন্দনাইশ অঞ্চলে রবি মৌসুমের অর্থকরি ফসল হিসেবে ব‍্যাপক সমৃদ্ধ । বেশ কয়েক বছর ধরে শীতকালীন ফসল হিসেবে আলু চাষ করে আসছেন এতদঞ্চলের কৃষকেরা।  অনেকেই ইতোমধ্যে আলু তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন, কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় কৃষকেরা আর্থিক ক্ষতি নিয়ে শঙ্কিত । মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম ৩০থেকে ৪০টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বর্তমানে ১২ থেকে ১৫ টাকায় নেমে এসেছে।  ভরা মৌসুমেও আলুর দাম নিয়ে তাই চরম শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।  আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে, কৃষকেরাও আলু চাষে মনোযোগি হয়েছেন। তবে সঠিক দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন আলু চাষিরা। দোহাজারী রেলওয়ে মাঠের সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আলু নিয়ে চাষিরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও ক্রেতা পাচ্ছেন না তেমন।  এক আলু বিক্রেতা জানান, চন্দনাইশের ২টি হিমাগার রয়েছে।  গত বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় অনেকের আলু হিমাগারে রয়েছে। সেখান থেকে এখনও আলু বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে।  ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছে কৃষকরা। আবার সন্তেুাষজনক দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে এখনও আলু তুলছেন না। চাগাচর এলাকার কৃষক ফয়েজ মিয়া বলেন,  অনেক আশা নিয়ে কষ্টের ফসল আলু বিক্রি করতে গেছি বাজারে। তবে বাজারে গিয়ে একবুক কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।  আলু উৎপাদনে যে খরচ ব্যয় হয়েছে তার অর্ধেক দামও তিনি পাননি বলে জানান। প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছেন মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকায়। 

আলু চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে আগাম আলু উৎপাদন করতে সাধারণত ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়।  গড়ে এক বিঘা জমিতে ৭৫ মণ আলু উৎপাদন হয়।  সে হিসাবে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়ে ১০ টাকার বেশি।  অথচ এ শীত মৌসুমে অন্যান্য সবজির দাম বাড়তি থাকলেও আলুর ক্ষেত্রে অন্যরকম।  অনেকেই লাভের আশায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এখন ঋণগ্রস্হ হয়ে পড়েছেন।  সংরক্ষিত আলু বাজারজাত করতে না পারলে বিপুল পরিমাণ আলু অবিক্রিত অবস্থায় পঁচনের আশংকা করছেন চাষীরা।  ন্যায্যমূল্য না পেলে আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারাবে আলু চাষিরা।  আলুর বাজারমূল্যে এ বিপর্যয় ঠেকাতে প্রক্রিয়াজাত কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি ও রপ্তানির উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টমহল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে মাত্র ৫৬ হাজার টন আলু মালয়েশিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, ব্রুনাই, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে।  কিন্তু বছর বছর রপ্তানি কমে যাওয়ায় আলুর দরপতন ঘটেছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।  সংকট দূর করতে ২০২৫ সাল নাগাদ আড়াই লাখ টন আলু রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে খসড়া রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ।  রপ্তানি উপযোগী ১৮টি আলুর উন্নতজাতের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান , চন্দনাইশে মোট ৫৮০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। বেশী ফলন হওয়ার কারণে দাম একটু কম। আমাদের চন্দনাইশে ২টি হিমাগার রয়েছে সব্জি সংরক্ষণের জন‍্য। যেহেতু দাম কম, তাই আমরা কৃষকদেরকে হিমাগারে সংরক্ষণের  পরামর্শ দিয়েছি। 



সবচেয়ে জনপ্রিয়