প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের সব নাগরিকের রয়েছে, এটি সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার রয়েছে ন্যায়বিচার পাওয়ার। আদালতে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্যই আসেন। আদালতের কর্তব্য হচ্ছে, বিচার প্রার্থী সব নাগরিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’
শনিবার (১৮ মে) সকালে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে দেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আদালতে অনেক বিচারপ্রার্থী আসেন। তাদের বসার জন্য তেমন স্থান থাকে না। সে কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রত্যেকটি আদালতে বিশ্রামাগার করে দিচ্ছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, আপীল বিভাগের সদ্য সাবেক বিচারপতি বোরহানউদ্দিন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাঈমা হায়দার, মো. হাবিবুল গণি, শেখ হাসান আরিফ, জে.বি.এম হাসান, জাফর আহমেদ, ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, মো. ইকবাল কবির, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, এস.এম কুদ্দুস জামান, জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ্ উদ্দিন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর মো. নূরে আলম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর মোহাম্মদ আবু হান্নান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত) মহিউদ্দিন মুরাদ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (২য় আদালত) মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৩য় আদালত) মোহাম্মদ আবদুল কাদের, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৪র্থ আদালত) মো. মোশারফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৫ম আদালত) নিশাত সুলতানা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (২য় আদালত) মোছা. রেশমা খাতুন, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার, সিনিয়র সহকারী জজ (সদর) সুশান্ত প্রসাদ চাকমাসহ আদালতের বিচারকগণ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, সাবেক সভাপতি এডভোকেট একেএম শাহজালাল চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহমদ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট সৈয়দ মো. রেজাউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার আদালত ভবনে আগত বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ।’ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ।
অত্যাধুনিক নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে ডিজাইন করা সুপরিসর আধুনিক বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জে একত্রে ৬০/৭০ জন বিচার প্রার্থী বসতে পারবে। থাকছে ওয়াশরুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার, ফাস্টফুডের দোকান, সুপেয় পানি সরবরাহ, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা কক্ষে বসার ব্যবস্থাসহ বহুমুখী সুবিধা। নির্মাণাধীন ন্যায়কুঞ্জের আয়তন এক হাজার বর্গফুট। যার ব্যয় বরাদ্দ ৫২ লক্ষ টাকা।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট সৈয়দ মো. রেজাউর রহমান নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ সম্পর্কে বলেন, মানুষ দূর-দূরাস্ত থেকে আদালতে আসেন, কেউ আসেন বিপদে পড়ে, আবার কেউ বিপদ থেকে উদ্ধার হতে এখানে আসেন। এসব বিচারপ্রার্থীরা আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে সাক্ষাতের পর এবং আদালতে যাওয়ার আগে-পরে আর বিশ্রামের জন্য কমন কোন জায়গা পাননা। বিশেষ করে নারী ও বয়স্ক বিচারপ্রার্থীদের আদালত পাড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ বিচারপ্রার্থীদের সেই দুর্ভোগ লাগবে সহায়ক হবে।
কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন, বিচারপ্রার্থীদের বসার জন্য একটি স্থান খুবই প্রয়োজন ছিলো। কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট বিচারব্যবস্থার অংশ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার বলেন, বিচারপ্রার্থীরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের কাছে আসেন। জুডিসিয়ারির স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন তারা। তাদের জন্য বিচার। কিন্তু তাদের বসার জন্য, ওয়াশরুম সারার জন্য কোন ব্যবস্থা আদালত প্রাঙ্গণে নেই। আবার বিচারপ্রার্থীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন সময় টাউট বাটপারের খপ্পরে পড়ে অযথা হয়রানির শিকার হন। নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ বিচারপ্রার্থীদের একদিকে, হয়রানি থেকে মুক্ত করবে, অন্যদিকে নিরাপদে বসার জায়গা হবে। তবে ন্যায়কুঞ্জ যেন দালাল, টাউট, বাটপারের দখলে চলে না যায়, তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র বানিয়ে না ফেলে। সেদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুনজর রাখতে হবে।