চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক মো.জাহেদ হোসাইনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করে মানহানির অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (২১মে) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস. রহমান হলে সাতকানিয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করলেও এ সম্মেলনের নেপথ্যে রয়েছে উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদের পুত্র কিশোর গ্যং লিডার, মাদক সম্রাট, হত্যা মামলার আসামি ও এলাকায় অবৈধ বালুখেকো হিসেবে পরিচিত দেলোয়ার হোসেন ওরফে মিন্টু। সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদকেও উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক জাহেদ হোসাইনকে নারীলোভী, কিশোর গ্যাং লিডার, ভূমিদস্যু, মাটি ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন বক্তারা। যা সাংবাদিক জাহেদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের সাথে ন্যুনতম সম্পর্ক নাই। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক জাহেদের ব্যক্তিগত ও তাঁর পরিবারের এলাকায় সম্মানজনক পরিচিতি রয়েছে। শুধু কালিয়াইশ এলাকা নয়, উপজেলার যে সকল জনহিতকর কর্মকাণ্ড রয়েছে তার কম বেশি সবকিছুর সাথে জাহেদ ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন। এছাড়া এলাকায় যে কোন অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে সামনে কাতারে থেকে তিনি প্রতিবাদ করেন। যার ফলে চেয়ারম্যান ও তার পুত্র মিন্টুসহ এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত সাংবাদিক জাহেদকে ঘায়েল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে অনেক আগে থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় জাহেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরসহ নানা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের এ আয়োজন। যা এলাকার সুধী সমাজ কোন মতেই মানতে নারাজ।
এ ব্যাপারে কালিয়াইশ ইউনিয়নের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, জাহেদ একজন শিক্ষিত সাংবাদিক। তাঁর ভাইদের মধ্যে একজন ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকের সিনিয়র সাংবাদিক এবং সাংবাদিক নেতা। আরেক ভাই একটি স্নাতক পর্যায়ের কলেজের অধ্যক্ষ। এ ছাড়া জাহেদের স্ত্রীও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। জাহেদের দুই সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান (মেয়ে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। অপর সন্তান (ছেলে) আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত। আত্মীয় স্বজনরা রয়েছে দেশের বিভিন্ন সর্বোচ্চ পর্যায়ে কর্মরত।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক জাহেদ এলাকায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী লোক হিসেবে সর্বজন পরিচিত। অন্যায়ের প্রতিবাদ ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে বাঁধা দেওয়ায় চেয়ারম্যান ও তার পুত্র জাহেদকে হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি মামলা ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মানহানি করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাতে চেয়ারম্যান ও তার পুত্র কোন দিন সফল হবে না। কারণ এলাকার লোকজন জানে জাহেদ চাঁদাবাজ না অন্যকিছু।
উল্লেখ্য যে, চেয়ারম্যানপুত্র দেলোয়ার হোসেন ওরফে মিন্টু স্থানীয় কলেজছাত্র সাজ্জাদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। সে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এবং মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। পাশাপাশি তার পিতা স্থানীয় চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে সাঙ্গু নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকেন। বিষয়টি দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার সাতকানিয়া প্রতিনিধি মো. জাহেদ হোসাইনের নজরে আসলে তিনি অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন। যার ফলে মিন্টুর অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সংবাদ প্রকাশের জেরে সে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক জাহেদ ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক মো. জাহেদ হোসাইন বাদী হয়ে গত (২৯এপ্রিল) দেলোয়ার হোসেন ওরফে মিন্টুসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে সাতকানিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিক মো. জাহেদ হোসাইনকে প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে ও হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দোহাজারী প্রেস ক্লাব, লোহাগাড়া প্রেস ক্লাব ও সাতকানিয়া উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মো. জাহেদ হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর বিরুদ্ধে শীঘ্রই আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়াও আমাকে এবং আমার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকিদাতাদের তদন্তপূর্বক দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি ।