আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সবার জীবনে প্রেম আসে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১২:০৪:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

কি আছে জীবনে আমার, যদি তুমি না থাকো পাশে মরণে। হয়তো আমার প্রাণ কাঁদবে শুধু বিরহের দিন গুণেৃ। হ্যাঁ, গানের কথার মতোই বিরহের দিন গুণে ক্যাম্পাসে পার হয়েছে একুশটি বসন্ত। প্রেয়সীকে পাননি, তাই আর সংসার করাও হয়নি। বয়স পেরিয়েছে চল্লিশের ঘর।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল পেরিয়ে হতাশার মোড়। সেখানে গিয়ে বসতেন প্রেমে ব্যর্থ যুবক, কাঁদতেন-গাইতেন বিরহের গান। শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত মুখ বারী ভাইও যেতেন সেই মোড়ে। কখনও কাক ডাকা ভোরে, কখনওবা বিকেল-সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে থাকতেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনে। আবার কখনও শহিদ মিনারের সামনে গিয়ে বসতেন প্রেয়সী আসার প্রতীক্ষায়। কিন্তু একবারও মুখ ফুটে বলা হয়নি-‘আমি তোমায় ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি’।

তাই ভালোবাসা দিবসকে বিশেষ কোনও দিন হিসেবে দেখেন না লাজুক শফিকুল বারী। তাঁর কাছে ভালোবাসা হলো-হৃদয়বৃত্তির বিশাল এক ভুবনে বিচরণ। এসময় কেউ হোঁচট খেয়ে আহত হয় আর কেউ হেঁটে পৌঁছে যায় গন্তব্যে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৯-২০০০ সেশনে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন শফিকুল বারী। বছর গড়াতেই মনটা বাঁধা পড়ে যায় সাংবাদিকতা বিভাগের তন্দ্রাহরণীর কাছে। নির্ঘুম রাত পেরিয়ে ভোর হয়, আলোর পরে আসে রাতের স্নিগ্ধতা। কিন্তু প্রাণের মানুষ থেকে যায় স্পর্শের বাইরে। একসঙ্গে দেখা হয় না সূর্যাস্ত, হাতে হাত ধরে বলা হয় না জমিয়ে রাখা কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হোসেন দিলেন সেই প্রেমের বর্ণনা, ‘বারী ভাই মেয়েটাকে খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু সাড়া পাননি। মেয়েটা আবার তাঁকে এড়িয়েও চলেননি। দেখা হলে সৌজন্যতা দেখাতেন, তাঁর মেধার প্রশংসা করতেন। ওইসময় এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হওয়ায় মেয়েটার পরিবারে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। কারণ, বিয়ের আয়োজন চলছিল তখন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বারী ভাইয়ের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তাঁর প্রেমের কথা জানতে পারি। প্রেয়সীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই বিরহকাতর বারী ভাই সেই ছাত্রী হলের সামনে গিয়ে বসে থাকতেন। একসময় মাস্টার্স পাস করে বেরিয়ে গেছি, তখনও বারী ভাই ক্যাম্পাস ছাড়েননি। ভালোবাসার মানুষের খোঁজে হতাশার মোড়ে, শহিদ মিনার এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতেন তিনি’।

অনেক চেষ্টার পর শফিকুল বারীর দেখা পাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলার ঝুপড়িতে। ভালোবাসার কথা বলতে নারাজ তিনি। কিন্তু মাঝখানের সময়টাতে কি করেছেন, কেনইবা ক্যাম্পাস ছাড়েননি- তা শুনে অবাক হতেই হলো। অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি এমবিএ (ফিন্যান্স), কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইংরেজি সাহিত্য সহ বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন পড়ছেন দাওরায়ে হাদিস, হাটহাজারী মাদ্রাসায়। মোট ডিগ্রির সংখ্যা কয়টি-জানতে চাইলে তাঁর জবাব, ‘১৭টির পর আর হিসেব করে দেখিনি’।

শফিকুল বারীর বাড়ি বগুড়ায়, পিতা ছিলেন মুহাদ্দিস। তাঁরা দুই ভাই, দুই বোন। বোনদের সন্তানরাও নিচ্ছেন উচ্চশিক্ষা। ভাই ও ভ্রাতৃবধূ চিকিৎসক। কিন্তু নিজের বিয়ে নিয়ে কোনও ভাবনাই নেই তাঁর। বললেন, ‘পড়ালেখার কোনও বয়স নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে একদিন অন্য কোথাও থাকবো, তা ভাবতেই পারি না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। একজন জাতীয় মানের ইসলামিক ইকোনোমিস্ট হওয়ার জন্য যদি সারাজীবনও পড়তে হয়, আমি রাজি আছি’।

চবির লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী জানালেন আরেক খবর। সেই প্রেয়সী একদিন স্বামীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছিলেন। এ খবর পেয়ে ছুটলেন বারী ভাইও। তাঁকে পিছু নিতে দেখে স্বামীকে জানালেন ক্যাম্পাস জীবনের কথা। হঠাৎ বারী ভাইয়ের গালে পড়লো থাপ্পড়। জবাবে বারী বলেছিলেন- ‘ধন্যবাদ। যে হাত দিয়ে স্ত্রীকে কবুল করে নিয়েছিলেন, সেই হাতের স্পর্শ পেয়েছি’।

শফিকুল বারী সেসব স্মৃতি এখন মনে করতে চান না। তবে তাঁর মতে, ‘ভালোবাসার আছে দুটি পর্যায়।  একটি হলো স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির প্রেম, অন্যটি সৃষ্টির সঙ্গে সৃষ্টির প্রেম। সবার জীবনে প্রেম আসে। ভালোবাসার কথা জানানো সুন্নত। তাই একে অপরের ভালোবাসার মূল উদ্দেশ্যও হবে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন’।

 

 

 

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়