সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দিদের মুক্তির দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধীদের ডাকা তৃতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হচ্ছে শুক্রবার সকাল ৬ টায়। এবারের অবরোধ কর্মসূচিতে খুব একটা সক্রিয় হতে পারেনি বিরোধী দলগুলো। তাই কর্মসূচির ধরনে এবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দল ও জোটগুলো।
বিএনপি ও দলটির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার ও শনিবার কর্মসূচি থাকবে না। এরপর ১২ ও ১৩ তারিখ হরতালের কর্মসূচি পালন করা হবে। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে বিএনপিসহ বিরোধীরা যে যার অবস্থান থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেবে।
তবে কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে নিশ্চিত কোনো তথ্য দেননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, বিকেলে আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তখন জানতে পারবেন।
নতুন কর্মসূচির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। সবকিছু বিবেচনা নিয়ে আমরা কর্মসূচি দেবো। অবরোধ-হরতালসহ আরও নানা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে।
নাম না প্রকাশে বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, টানা অবরোধ কর্মসূচি চলতে থাকলে মানুষের মধ্যে বিরক্তি চলে আসবে। নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে যাবে। এমনিতে নেতাকর্মীরা ঘর-বাড়িতে থাকতে পারছে না। তাই দুই দিনের বিরতি দিয়ে এবার দুই দিনের হরতাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, সরকার আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেই হিসেবে বিরোধী দলগুলোর হাতে খুব বেশি সময় নেই। বড় জোর ৬-৭ দিন সময় আছে। তাই এর মধ্যে সরকারকে বড় একটা ঝাঁকুনি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, সেটা কিভাবে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। যদিও সরকার ইতোমধ্যে সেটা বুঝে গিয়ে বিএনপিসহ বিরোধীরা যেন মাঠে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে। ইতোমধ্যে বিএনপির প্রায় শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি মাঠের সক্রিয় ও তৃণমূল নেতাদেরও গ্রেফতার করছে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পরও প্রতিটি নেতাকর্মী কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রমাণ করে বিএনপি একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সরকার যতই চেষ্টা করুক বিএনপিকে ভাঙতে পারবে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছেন, বর্তমানে দেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তা থেকে বের হয় আসতে হলে সরকারকে তার উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে বিএনপির কিছু করার নেই। তাছাড়া বিএনপি তো এখন কারাগারে ও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন সরকার যদি কোনো উদ্যোগ না নেয় তাহলে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে।
এদিকে গত ১৩ দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবারও বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। কার্যালয়ের গেটে পড়ে আছে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া চিঠিসহ বিভিন্ন চিঠি। আর প্রতিদিনের মতো আজও দলটির কার্যালয়ে দুই পাশে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।