রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলমের বিরুদ্ধে আপন ভাতিজাদের জমি দখলে নিতে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে আপন ভাবি, ভাতিজাসহ পরিবারের সদস্যদের হামলার অভিযোগে আদালতে মামলাও হয়েছে। ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি চেয়ারম্যান শামসুল আলম। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন শামসুল আলমের ভাতিজা ও ভুক্তভোগী এডভোকেট আয়াত উল্লাহ হোমিনী।
তিনি কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা লামারপাড়ার বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ হোছনের প্রথম স্ত্রীর সন্তান।
সংবাদ সম্মেলনে আয়াত উল্লাহ হোমিনীর মা (হাজী মোহাম্মদ হোছনের প্রথম স্ত্রী) মাহমুদা খাতুন, ভাই
হাবিব উল্লাহ, ওমর ফারুক, তৈয়ব উল্লাহ, বোন সাবেকুন নাহার, খালেদা বেগম ও হাসিনা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
আয়াত উল্লাহ হোমিনী বলেন, আমার পিতার দুই স্ত্রীর মাঝে আমরা প্রথম স্ত্রী (মাহমুদা খাতুন) এর ঘরের ৭ সন্তান। আমরা ৪ ভাই তিন বোন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে পাঁচ সন্তান। ২০১৬ সালে আমার পিতা হাজী মোহাম্মদ হোছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ৫ সন্তানদের মধ্যে চারজনের নামে ৬ বিঘা জমির দানপত্র দলিলমূলে রেজিস্ট্রি করে দেন। যা আমরা প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা অবগত নই।
পরে প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা ঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিকভাবে নালিশ করলে বিরোধ নিষ্পত্তি সমাধানের পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে, দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা যে পরিমান জমি দানপত্রমূলে রেজিস্ট্রি পেয়েছে; সেই পরিমান জমি প্রথম স্ত্রীর সন্তানদেরও দেবেন। কিন্তু তা রহস্যজনক কারণে সমাধান হয়নি। তারপরও প্রথম স্ত্রীর ৭ সন্তানের মধ্যে ৪ ছেলের নামে ৫ বিঘা বা কানি সম্পত্তি দানপত্রমূলে রেজিস্ট্রি করে দিলে তা ছিল নিম্নমানের, ত্রুটিযুক্ত ও অন্যদের নামিয় জমি। তবে প্রথম স্ত্রীর ৩ মেয়ের নামে কোন জমি দান করেননি। এদিকে বিবাদমান এই সময়ের মধ্যে আমার বাবা মোহাম্মদ হাছন দ্বিতীয় স্ত্রীর ৫ সন্তানের নামে দ্বিতীয় দফায় অধিক মূল্যমানের ১৩ কানি জমি দানপত্র মূলে রেজিস্ট্রি করে দেন। পাশাপাশি প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানদের বঞ্ছিত করার লক্ষ্যে আরও ১১ কানি জমি বিক্রি করে সমুদয় টাকা দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের নামে দিয়ে দেন। এমনকি প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানদের হাটার বা চলাচলের রাস্তা সহ বাড়ির উঠানও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানদের নামে দলিলমূলে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দেন।
আয়াত উল্লাহ হোমিনীর অভিযোগ, এসব দুর্নীতি, অপরাধের নেপথ্যে কাজ করছেন আমার পিতার ছোট ভাই ও কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম।
তিনি আমার পিতার ২ স্ত্রীর সন্তানদের মধ্যে ঝগড়া বাধিয়ে দিয়ে খুনের ঘটনা ঘটিয়ে ফায়দা লুটতে চান। তার পরিকল্পনা মাফিক গত ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানেরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে নৃশংস হামলা চালায়। এতে আমাদের চার ভাই বোন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে মামলা নেয় রামু থানা। মামলার এজাহারভুক্ত ৪নং আসামি হলেও শামসুল আলমকে রহস্যজনক কারণে চার্জশিট থেকে বাদ দেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে আমার পিতাকে মামলার এজহারভুক্ত আসামি না করলেও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে চার্জশিট জমা দেন। ওই চার্জশিট আদালতে দাখিল করলে এজাহারভুক্ত আসামি শামসুল আলমকে বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চান বিচারক। সেই সঙ্গে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ও শামসুল আলমকে চার্জশিটভুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে মামলাটি আমলে নেয় আদালত।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শামসুল আলম চেয়ারম্যান মিথ্যা অপপ্রচার ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভাতিজা (মামলার বাদি) আয়াত উল্লাহ হোমিনী।
তিনি বলেন, শামসুল আলম তার জামাতাকে দিয়ে আমাকে খুন করার হুমকি দিয়েছে, যার কল রেকর্ড সংরক্ষিত। বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
শামসুল আলমের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারি, বিভিন্ন মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনার জনশ্রুতি আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ভাতিজা আয়াত উল্লাহ হোমিনী।
তিনি বলেন, এলাকার প্রায় ঘটনায় শামসুল আলমের ইন্ধন থাকে। আমার পরিবারের প্রতিটা ঘটনায়ও কলকাঠি নাড়াচ্ছেন তিনি। আমাদের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লাগিয়ে দিয়ে সুবিধা হাসিলের সুদূর কর্মপরিকল্পনা তার।
শামসুল আলমের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নিকট আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল আলম বলেন, আমি খারাপ হলে মানুষ চেয়ারম্যান বানাতো? আমার ভাতিজারা কেন অপপ্রচার করছে জানিনা। তবে এসব কারণে আমি এলাকাবাসীর সিম্পেথি পাচ্ছি।