বায়তুশ শরফের পীর আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদভী বলেছেন, মুসলমানরা শ্রেষ্ট জাতি হওয়ার পরেও জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়ার কারণে নির্যাতিত। ইসলামে কোন জঙ্গীবাদ নাই। অজ্ঞতার কারণে হয়ত কেউ ওই পথে পা বাড়ায়। তিনি বলেন, হাদিস শরীফে যে জ্ঞান অর্জনের কথা বলা হয়েছে তা হল- যেসময় যেজিনিসের দরকার সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। শনিবার রাতে শেখ মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানীকে বড় পীর সাহেব বলা হয়ে থাকে। কারণ তাঁর আত্মশুদ্ধির তরিকা অন্যন্য তরিকার চেয়ে উত্তম। বায়তুশ তাঁর মৃত্যু দিবসকে স্মরণ করে ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুম পালন করে থাকে। কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুম উপলক্ষে রবিবার ও সোমবার অনুষ্ঠিতব্য দুইদিন ব্যাপী মাহফিলে ইছালে ছওয়াবকে সফল ও সার্থক করতে শনিবার (৫ নভেম্বর) রাতের পরামর্শ সভায় শাইখ আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদভী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বায়তুশ শরফ মসজিদে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ আলেমে দ্বীন মাওলান শফিক আহমদ। বায়তুশ শরফ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আব্দুল হাই নদভী আরো বলেন, মুমিন জীবনের সার্থকতা জন্য আল্লাহর ওলীদের অনুসরণ করা দরকার। কারণ এদেশে ইসলাম এসেছে আওলীয়াদের মাধ্যমে। তাই তাদের অস্বীকারের সুযোগ নাই। অলীদের সুহবতে লক্ষ লক্ষ পথভ্রষ্ট মানুষ হেদায়াত পেয়েছে। পীর সাহেব আরো বলেন, শয়তানের অনেক জ্ঞান ছিল। কিন্তু আল্লাহর সাথে বেআদবী করায় অভিশপ্ত হয়েছে। তাই আদবের গুরুত্ব জ্ঞানের চেয়ে বেশী। অনেক বিষয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। তবে আমরা এখতেলাফ নিয়েই এত্তেফাক থাকতে চাই। পীর সাহেব বলেন, ১৯৫২ সালের ২ অক্টোবর আঞ্জুমনে ইত্তেহাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ। কক্সবাজারে ২য় বায়তুশ শরফ বায়তুশ শরফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মরহুম শাহ আব্দুল জব্বার (রহ.)। আক্তারাবাদে ১৯৭৪ সালে ৩য় বায়তুশ শরফের শাখা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এভাবে সারা দেশে শতশত বায়তুশ শরফের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু কক্সবাজার বায়তুশ শরফে এখন ১০ টি প্রতিষ্ঠান চলছে। পরামর্শ সভায় কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক আলহাজ্ব এম এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বায়তুশ শরফ একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি সবার জন্য সম্মানের ও জ্ঞানী গুণীদের প্রতিষ্ঠান। বায়তুশ শরফ একটি সুশোভিত বাগান। যেরকম বাগানের স্বপ্ন দেখেছিলেন মরহুম শাহ আব্দুল জব্বার (রহ.)। তিনি বলেন, বায়তুশ শরফ ও মরহুম পীর সাহেব শাহ আব্দুল জব্বারকে নিয়ে গবেষণা করে ইতোমধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। কক্সবাজার বায়তুশ শরফে ১০টি প্রতিষ্ঠান চলছে। একাডেমি ও মাদরাসার ছাত্ররা মাহফিলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেব কাজ করছে। ১১ রবিউচ্ছানী নবীজীর বড় অনুসারী হড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। প্রতিবছর এই দিনে কক্সবাজার বায়তুশ শরফে ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুম বা ইছালে ছওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বায়তুশ শরফে ইসলাম ও শরিয়াহ বিরোধী কোন কাজ হয়না। মাহফিলে আঞ্জুমনে নওজোয়ান ও দরবারের খাদেমরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকেন। মাহফিলে যারা আসবেন ও কাজ করবেন সবাই আদব রক্ষা করে আল্লাহ ও রসুলের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবেন। উল্লেখ্য, এই মাহফিলে প্রধান পৃষ্টপোষক ও রৌনকে মাহফিল থাকবেন রাহবরে বায়তুশ শরফ শাইখ আল্লামা আব্দুল হাই নদভী। প্রধান মেহমান আওলাদে রসুল (স.) আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবেরী আল মাদানী। এছাড়াও দেশ বরেণ্য আলেম ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ তশরীফ আনবেন। মাহফিলে দ্বীন দরদী সবাইকে শরীক হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী হাসিল করার আহবান জানান এমএম সিরাজুল ইসলাম। পরামর্শ সভায় বক্তব্য রাখেন, বায়তুশ শরফ জামে মসজিদের খতীব মাওলানা রিদুয়ানুল হক, দৈনিক ইনকিলাবের কক্সবাজার ব্যুরোচীফ শামসুল হক শারেক, বায়তুশ শরফ শাহ কুতুব উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নজরুল ইসলাম, এতিমখানার পরিচালক আলহাজ্ব সৈয়দ আলম, আঞ্জুমনে নওজোয়ানের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, হিফজ বিভাগের পরিচালক হাফেজ মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, জব্বারিয়া একাডেমির সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম, শাহ কুতুব উদ্দিন দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মোঃ ইউছুফ। এছাড়া কাজি মাওলানা নাসির উদ্দীন, মাওলানা ইউছুপ আরমান, মারছা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরতুজা হাসানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। দুইদিন ব্যাপী মাহফিলের কর্মসূচীর মধ্য রয়েছে রবিবার সকাল ৬ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত খতমে কুরআন, খতমে সুরায়ে আনআম, খতমে খজেগান, খতমে তাহলিল ও খতমে বোখারী। বাদে জুহর ১২ শত আসন বিশিষ্ট শাহ আব্দুল জব্বার অডিটোরিয়াম উদ্বোধন করবেন আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদভী। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত মাহফিল। ৭ নভেম্বর ভোর ৪ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সালাতুত তাহাজ্জুদ ও যিকির মাহফিল। সকাল সাড়ে ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত ৯জন হাফেজে কুরআনের দস্তারবন্দী, মিলাদ, তাওবা ইস্তিগফার। সবশেষে বায়াত ও আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।