মিরসরাইয়ে টানা তিন’দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। বৃষ্টির কারণে কাজ না থাকায় কষ্টে রয়েছেন দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। অনেক মৎস্য প্রকল্প থেকে মাছ ভেসে গেছে।
জানা গেছে, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছড়া, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাফুনী, ওসমানপুরের মরগাং, চিনকীআস্তানা, সরকারতালুক, মাইজগাঁও, খাজুরিয়া, ইছাখালী ভূঁইয়া গ্রাম ও খিলমুরালী গ্রামের ৪ সহস্রাধিক পরিবার।
ফেনাফুনি এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন শিবলু বলেন, আমরা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানির মধ্যে বসবাস করছি। সামান্য বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে পুরো এলাকা ডুবে যায়। মূলত ফেনাফুনি খালটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এমনটা হচ্ছে। এক মাস পূর্বে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিলেও গত দুইদিনের বৃষ্টিতে আমরা ডুবে রয়েছি।
উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপাশে কৃষি জমি ভরাট করে পার্ক ও শিল্পকারখানা নির্মাণ করার ফলে অনেগুলো ছড়া ও ব্রীজের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী অংশ পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া আবুতোরাব বাজার এলাকায় মায়ানী-মঘাদিয়া খালে দেখা গেছে, আবুতোরাব বাজারের পেট ঘেঁষে খালটি পশ্চিম দিকে ঘুরেছে। বাজারটির পূর্ব অংশ থেকে শুরু করে মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম অংশ পর্যন্ত দখল-দূষণে ছোট হয়ে আসছে এই খাল। খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। কেউ কেউ খালের ওপর খুঁটি পুঁতে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করছেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি কিছু প্রভাবশালীও দখল প্রতিযোগিতায় মেতেছেন সমানতালে। এছাড়া পুরো একটি বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলার অন্যতম স্থান হিসেবে তারা এই খালটিকে বেছে নিয়েছেন। এতে বৃষ্টি হলে পানি আটকে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, আমার ইউনিয়নের ফেনাফুনি ও সৈদালী গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের লোকজন খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে আমার ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমার ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
৬নং ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ভারি বর্ষণের কারণে আমার ইউনিয়নের টেকেরহাট থেকে সাহেবদিনগর গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। অধিকাংশ জায়গায় খাল ভরাটের কারণে পানি নামছে না। ত্রাণ সরবরাহের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ডুবে গেছে। এছাড়া সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুইদিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা পাঁচদিন বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্যচাষীদের ক্ষতি হতে পারে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, টানা বৃষ্টিতে মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে পানিবন্দি হয়ে আছে অনেক পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও সম্পদের হিসাব বিবরণীর জন্য উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিকট ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে পানিবন্দি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে গেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা ও খাল দখল করার কারণে নিম্নাঞ্চলের পানি জমাট হয়ে আছে। পানিবন্দি পরিবারের তালিকা করে শীঘ্রই শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।