ভারত চাল রফতানি বন্ধ করলে বা রফতানিতে শুল্ক বাড়ালে দেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও চাহিদার হিসাব কষে এমন কথাই বলছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। একই সুর কৃষিবিদদের কণ্ঠেও।
গত ২০ জুলাই বিশ্বের বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ ভারত বাসমতি ছাড়া অন্য সব চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশটির মোট চাল রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশই হচ্ছে এই জাতের চাল।
পরে ২৫ আগস্ট থেকে সিদ্ধ চাল রফতানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটি। এরপরে বাসমতি চাল রফতানিতে টনপ্রতি ন্যূনতম দাম বেঁধে দিয়েছে ভারত সরকার। এখন থেকে টনপ্রতি কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ ডলারে বাসমতি চাল রফতানি করতে হবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে যখন এমন সিদ্ধান্ত তখন বাংলাদেশের ক্রেতাদের আতঙ্ক আবারও দাম বাড়ার। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বাজারে সব কিছুর দামই বাড়তি। কাজেই আবার কোন পণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ে, তা নিয়ে আমাদের আতঙ্কে দিন কাটে।
ভারতের শুল্ক আরোপকে পুঁজি করে দেশের বাজারে প্রভাব ফেলানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। এর জন্য তারা দেশের বাজারে চালের দাম বাড়ানোর কারসাজি করছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
কাজেই শুরুতেই প্রশ্ন জাগে প্রতিবেশিীদেশটির এমন সিদ্ধান্তে কতটা প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে? এর জবাবে দেশের এক চাল ব্যবসায়ী বলেন,
বাজারে চালের প্রচুর সরবরাহ। চাল চাইলেই পাওয়া যায়। কোনো ঘাটতি নেই। দামও আগের মতোই আছে।
আরেকজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, ভারত যদি চিন্তা করে যে চাল দিবে না, তা সত্ত্বেও আমরা আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশের ধান-চাল উৎপাদনের পরিসংখ্যান
ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রাথমিক তথ্য বলছে, বোরো-আমন-আউশ মিলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ১ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন।
১০ শতাংশ হার্ভেস্টিং লস আর পশুখাদ্য, বীজসহ অন্যান্য খাতে ১৬ শতাংশ ব্যয় বাদ দিলে মানুষের খাবার উপযোগী চাল থাকে ২৯৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, বছরে একজন মানুষের চাল দরকার হয় ১৫২ কেজি। সেই হিসাবে জনসংখ্যা বিবেচনায় বর্তমানে দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ২৫৮ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন চাল।
অর্থাৎ আমদানি ছাড়াই সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে উদ্বৃত্ত থেকেছে ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন চাল।
একই হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে থেকেছে ২৫ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন চাল।
কাজেই চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনই যেখানে যথেষ্ট সেখানে কি দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে আমদানি বাধা? এমন প্রশ্নের জবাবে চাল ব্যবসায়ীরা জানান, যদি দেশে বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ বা ক্রাইসিস না দেখা দেয়, তাহলে আশা করা যায় কোনো সমস্যা হবে না।
কী বলছেন কৃষিবিদরা
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলামও। তিনি বলেন, এখনে যে চালের মজুত রয়েছে। এতে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
তবে উদ্বৃত্ত যোগানে তৃপ্তির ঢেঁকুর না তুলে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কড়া নজরে রাখার পরামর্শ দেন এই কৃষিবিদ। বলেন,
ব্যবসায়ীদের একটি প্রবণতা হচ্ছে তারা সবসময় চিন্তা করেন যে, কোনো একটি সংকট হলেই দাম বাড়িয়ে কিভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। তারা সমাজ, দেশ বা মানুষের জন্য চিন্তা করেন না। কাজেই অবশ্যই তাদের নজরদারির আওতায় রাখা উচিত।
চলতি আমন মৌসুমে উজানের ঢলে বান ডাকা তিস্তার পানি কৃষকদের চোখ ভেজালেও এরই মধ্যে আবাদের আওতায় এসেছে লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশের বেশি জমি। যা কিছুটা হলেও স্বস্তির বার্তা দেয় দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশকে।