সাতকানিয়ায় গতকাল মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিজিবির প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বিএএম, এনডিসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টা সময় বিজিবির মহাপরিচালক কে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। ভাষণের শুরুতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিক নির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে সকলের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। মহাপরিচালক বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে এ বাহিনীতে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, এটিভি, এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল এবং এয়ার বোটসহ দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি’র প্রশিক্ষণ কর্মকান্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি), বায়তুল ইজ্জত,
সাতকানিয়ার পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাছাড়া বিজিবির আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কুমিল্লায় বর্ডার
গার্ড স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স এবং খুলনায় বর্ডার গার্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক বলেন, “শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সেই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি।’’ নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবি’র চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র উপর অর্পিত যেকোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। মহাপরিচালক ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআরের তৃতীয় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রদত্ত চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদেরকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্ভীক ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী হয়ে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবর্দা সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান। তিনি বিজিবি’র নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজোদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পনের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান। সেদিক থেকে আজকে ১০০ তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০০ তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৩৭২ রিক্রুট (জিডি) ইমরান হোসেন সুয়েব, সর্ববিষয়ে দ্বিতীয় ও শারিরীক উৎকর্ষতা (মহিলা) বিষয়ে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৭১৩ সিপাহী খাদিজা খাতুন, ফায়ারিং-এ শ্রেষ্ট রিক্রুট বক্ষ নম্বর-৩৭৭ সিপাহী উজ্জল হোসেন শারিরীক উৎকর্ষতা (পুরুষ) বিষয়ে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-১৪২ সিপাহী জনি হোসেন এর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকসদল মহাপরিচালককে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরিশেষে বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয় । উল্লেখ্য, ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ চলতি সালের গত ১৮ জুন বিজিটিসিএন্ডসিতে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৫৮২ জন রিক