আজ রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১

বিকল্প পা দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু সাত প্রতিবন্ধীর বিকল্প পা পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে টুম্পা

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০১:১৩:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক পৃথিবীব্যাপী বিরাজমান। মানুষ প্রতিনিয়ত কোন না কোন ভাবে জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার জন্য নানাবিধ কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে এই সমাজে টিকে থাকার প্রাণপন প্রচেষ্টায় রয়েছে। একটা মানুষের প্রতিবন্ধকতা চারপাশে মাকড়সার জালের মত বিস্তৃতি লাভ করলেও এখনো এই সমাজে সজ্জন, নিঃস্বার্থ পরোপকারী, দয়ালু এবং নিরহংকারী মানুষের কদর রয়েছে বিরাজমান।

সাদিয়া কাশেম টুম্পাকে এখন আর এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে হবে না। এখন থেকে টুম্পা অন্য শিক্ষার্থীদের মতো স্বাভাবিক ভাবে দুই পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে পারবে। শুধু টুম্পাই নয়, চকরিয়া ও মহেশখালীতে এ রকম বিকল্প ৭জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কৃত্রিম পা পেয়ে নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করেছেন। আর এসব প্রতিবন্ধীর কাছে বিকল্প পা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া মতো। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি টুম্পা বলেছেন এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া যে কত কষ্টের তা একমাত্র তিনিই বুঝেন। বিকল্প পা পেয়ে টুম্পারা যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। এধরণের আরও অনুভুতি ব্যক্ত করেছেন বিকল্প পা প্রাপ্ত ৭ উপকারভোগী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। গত শুক্রবারে এসএআরপিভি’র উদ্যোগে চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরীস্থ কার্যালয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে 'বিকল্প পা' তুলে দেয়া হয়। এসময় প্রতিবন্ধীদের মাঝে শীতবস্ত্রও তুলে দেন।

এসএআরপিভি’র আঞ্চলিক পরিচালক কাজী মাকসুদুল আলম (মহিত) এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. তৈয়ব সিকদার, পিকু প্লাস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খোরশেদ আনোয়ার চৌধুরী, মাসুদ গ্রুফ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান মো: আশরাফ হোসেন মাসুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাফর মোরশেদ, লায়ন শওকতুল ইসলাম ও সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম।

 

উপকারভোগী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সাদিয়া কাশেম টুম্পা, আব্দুল মাবুদ, বাবুল দাশ, নুরু জাহান, সৈয়দ আলম, গিয়াস উদ্দিন ও আব্দুর রহমানদের জীবনে অনেক গুলো বছর কেটেছে অবহেলা ও অনেক দৈন্যকষ্টে। কেউ কেউ জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী, আবার কেউ দুর্ঘটনায় পড়ে প্রতিবন্ধীতার শিকার। অনেকই এতোদিন ক্রাসের ওপর ভর দিয়ে চলাফেরা করছে, আবার কেউ এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে। এখন এসএআরপিভি থেকে বিকল্প পা পেয়ে তারা অন্যদের ন্যায় স্বাভাবিক মানুষের মতো দুই পায়ে চলাফেরা করতে পারবেন। তাদের সেই দৈন্যকষ্টের জীবন এখন অনেকটা আনন্দের ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

মহেশখালী পৌরসভার পূর্বঘোনা পাড়ার টমটম চালক মোহাম্মদ জালাল প্রকাশ মানিকের মেয়ে সাদিয়া কাশেম টুম্পা (১৭)। সে মহেশখালী কুতুবজুম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী।

কৃত্রিম পা পাওয়া স্কুল ছাত্রী টুম্পা জানায়, সে চার বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা হারায়। দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে তার পায়ের হাটুর নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। সেই থেকে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে তার চলাফেরা। তাকে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে হয়েছে স্কুলে। এখন বিকল্প পা পেয়ে সে মহাখুশি। তাকে আর এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে হবে না। সে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো দুই পায়ে হেটে স্কুলে যেতে পারবে। তাই টুম্পা এখন থেকে বিকল্প পা দিয়ে হাটার অনুশীলন করছেন।

টুম্পা আরও জানায়, তার ইচ্ছে করছে কালই যেন দুই পায়ে হেটে স্কুলে গিয়ে অন্যসব সহপাঠীদের চমক লাগিয়ে দিতে। যার পা নেই সেই বুঝে এ জীবন কত কষ্টের ও অবহেলার।

মাসুদ গ্রুফ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান মো: আশরাফ হোসেন মাসুদ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. তৈয়ব সিকদারের আর্থিক সহযোগিতায় এই বিকল্প পা গুলো বিতরণ করা হয়েছে।

বিতরণ অনুষ্ঠানে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী মহৎ এই কাজের জন্যে এসএআরপিভিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেছেন, মানবিক এই কাজগুলো চলমান রাখার জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে ব্যক্ত করেন। সরকারের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সকলকে এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসার জন্যও তিনি আহবান জানান।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেছেন 'মানুষ মানুষের জন্য’। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সেরা জীব হিসেবে স্বাভাবিক ভাবে মানুষের মানবীয় গুণাবলীর স্ফুরণ ঘটিয়ে তার শ্রেষ্ঠত্বের জানান দেওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি তার উল্টো। পৃথিবীতে স্থায়ীভাবে থাকা যাবে না এবং মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার কোন বিকল্প নেই। একদিন সবকিছু অতীত হবে। তাই সময় থাকতেই সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। 

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মতো স্বাভাবিক মানুষেরা যদি কিছুটা অনুধাবন করতে পারে তাহলেই হয়তো বদলে যাওয়া পৃথিবীতে নতুন দিগন্তের দেখা মিলবে।

বেসরকারী সংস্থা এসএআরপিভি মানুষের কল্যাণে যে মানবিক কাজ গুলো করে যাচ্ছে তা সত্যিই মহৎ। এ ধরণের প্রতিবন্ধির পাশে থাকার জন্যে তিনি এসএআরপিভি’কে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি উপজেলা প্রসাশন এসএআরপিভি’র সকল জনহিতকর কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।