আজ বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পাহাড়ধসে মা-মেয়ে নিহত, হাজারো ঘরবাড়ি প্লাবিত

বান্দরবান ও চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি: সেনা মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৮ অগাস্ট ২০২৩ ০৯:৫১:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতিও। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে নগরীর রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়িসহ নানা স্থাপনা। অপর দিকে

বান্দরবান সদরে অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধসে একই পরিবারের মা-মেয়ে নিহত হয়েছেন। প্লাবিত হয়েছে হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। বান্দরবান-থানচি সড়কের ১২ মাইল এলাকায় পাহাড়ধসে সড়কে গাছ পড়ে বান্দরবান থেকে রুমা-থানচি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বান্দরবান ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। তারা দূর্গত এলাকায় পাহাড় ধসে ঝুকিপুর্ণদের সরানো, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাবে। 

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বান্দরবান সদর, রুমা, আলীকদমসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।

বান্দরবান সদরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার অজিত দাস  বলেন, গতকাল দুপুরে পাহাড়ধসে বান্দরবান সদরে একই পরিবারের মা-মেয়ে নিহত হয়েছেন। তারা পৌরসভার কালাঘাটা গোধার পাড় এলাকার বাশি শীলের স্ত্রী ও মেয়ে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে বাসি দাসের স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বান্দরবান সদরের ক্যাচিং ঘাটা এলাকার বাসিন্দা ওসমান আলী বলেন, তার ঘরের দ্বিতীয় তলা পানিতে ডুবে গেছে। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেননি।বাধ্য হয়ে ক্যাচিং ঘাটা সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন।

আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, মাতামুহুরী নদীর পানিতে চৈক্ষ্যং ইউপি পরিষদ এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়ে আলীকদমে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

বান্দরবান সদরের বাসিন্দা রামপদ দাস বলেন, ‘গতরাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা তুলতে পারছি না।’

দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন থেকে ১৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট কতজন আশ্রয় নিয়েছেন তা জানা যায়নি। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে  চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের কালাম কলোনিতে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন মো. মোমিন (৪৫)। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চার দিন ধরে পরিবার নিয়ে পানিবন্দি তিনি। তার বাসায় জ্বলছে না রান্নার চুলাও। মোমিনের পরিবারের মতো নগরীতে কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব পরিবারে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। মোমিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাসায় পানি ঢুকেছে। দিন দিন পানি বেড়েই চলেছে। এখনও হাঁটু সমান পানি রয়েছে। তবে সড়কের চেয়ে আমার বাসাটি উঁচু হওয়ায় পানি কিছুটা কম উঠেছে। সড়কে এখনও কোমর সমান পানি। পানিতে ডুবে আছে রান্নাঘর। যে কারণে চার দিন ধরে আমার বাসায় রান্না হচ্ছে না। পানিতে বাসার অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতিও। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে নগরীর রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়িসহ নানা স্থাপনা।

নগরীর চক সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে চকবাজার এলাকার চক সুপার মার্কেট। এ মার্কেটে পানি ঢুকেছে। মার্কেটের নিচতলায় ৫৫টি দোকান আছে। তার মধ্যে ৩৫-৪০টিতে পানি ঢুকেছে। এতে কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’

পানিতে ডুবেছে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় অবস্থিত স্বজন সুপার মার্কেটের নিচতলা। নিচতলায় থাকা শতাধিক দোকানেই পানি ঢুকেছে বলে দাবি এ মার্কেটের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘পানিতে এবার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ৪০ লাখের বেশি টাকার পণ্যের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গত চার দিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে এ মার্কেট খোলা যায়নি।’

অন্যান্য এলাকার মতো ডোবেনি দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। তবে খাতুনগঞ্জ-চাকতাই এলাকার বেশ কিছু আড়তে দুই আগস্টের বৃষ্টিতে কয়েকশ’ দোকানে পানি ঢুকেছিল। এ সময় কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম। তিনি বলেন, ‘চাকতাই-খাতুনগঞ্জে খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণ করেছে সিডিএ। এ কারণে জোয়ারে এবার পানি প্রবেশ করতে পারেনি। বেচা-কেনা নেই বললেই চলে। জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য আনা-নেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে ব্যবসায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল শুক্কুর বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় রিয়াজুদ্দিন বাজারে এবার ২০০ থেকে ২৫০টি দোকানের পণ্য নষ্ট হয়েছে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা যায়নি। কাজ চলছে। জলাবদ্ধতার কারণে চার দিন ধরে এই বাজারে দোকানপাট খোলা যাচ্ছে না।’

 

তিনি আরও জানান, এবারই প্রথম রিয়াজুদ্দিন বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। আগে কখনও পানি না ঢোকায় দোকানিরা সেভাবে প্রস্তুতও ছিলেন না, যে কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এখানে কাপড়ের দোকান, সুপারির গুদাম, আচারের দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে চারটি প্রকল্পের কাজ। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে হলেও মিলছে না কোনও সুফল। বরং দিন দিন বাড়ছে জলাবদ্ধতার সমস্যা।