আজ বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাঁশখালীতে ত্রাণের চাল আত্মসাৎ, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক বাঁশখালী : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৩ জুন ২০২৪ ১০:০৬:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার ও ইউপি মেম্বার শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল (২৩ জুন) রবিবার এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপির ব্যক্তিগত সহকারী মীর মো: নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে বাঁশখালী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় চেয়ারম্যান জসিম হায়দার ও মেম্বার শহিদ ছাড়াও চাল বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডি চট্টগ্রামকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মামলায় চেয়ারম্যান জসিম হায়দারকে সরকারী চাল চোর চক্রের সদস্য হিসেবে অবিহিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় বাঁশখালীতে তোলপাড় ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের এক হাজার জেলের জন্য মাথাপিছু ৫৬ কেজি করে ৫৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ১১ জুন রাতে সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপির কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে, চাঁনপুর খাদ্য গোদাম থেকে উত্তোলন করা জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫৬ টন চালের মধ্যে কিছু চাল আসামিদের যোগসাজশে আত্মসাতের ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত খাদ্য গোদামে না রেখে বেআইনিভাবে বিক্রি করে বিক্রিত টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অন্যত্র সরিয়ে রাখে। পরদিন ১২ জুন সকাল ৮টায় সাংসদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে  আসামিদের নিয়োগকৃত শ্রমিকরা চাল বিতরণের জন্য প্রস্তুত হন। উপকারভোগী জেলেরাও চাল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো ছিল। এসময় সাংসদ উপস্থিত হয়ে শ্রমিক ও  জসীম উদ্দিন হায়দারকে কত টন চাল আছে জিজ্ঞেস করলে ৫৬ টন চাল আছে বলে জানায়। তখন সাংসদ মুজিবুর স্তুপকৃত চাল ওজন করে দেখতে বললে জসীম হায়দার বলেন, ‘আপনি দু’তলায় গিয়ে বিশ্রাম নিন। আমরা ওজন করে দেখছি।’ জবাবে সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, ‘আমি ওপরে যাবো না, আমার উপস্থিতিতে ওজন করতে হবে।’ এসময় জসীম উদ্দিন হায়দার ও শহীদুল ইসলামের অনিচ্ছা দেখতে পেয়ে ১০ জন লোককে জনপ্রতি ১ হাজার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাদের মাধ্যমে আসামি, সাক্ষী ও স্থানীয় জনসাধারণের উপস্থিতিতে উক্ত চাল ওজন করেন। ওজন করার পর দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের গোদামে ৪০ টন চাল রয়েছে। অবশিষ্ট ১৬ টন পাওয়া যায়নি। এসময় সাংসদ মুজিবুর রহমান  ইউপি সচিব মোহাম্মদ জালাল মিয়ার কাছ থেকে চালানের কপি দেখতে চাইলে তিনি চালানের কপি না পাওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানান। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার ও শহীদুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদে স্তুপকৃত চাল কম বলে স্বীকার করে নেন। এসময় চেয়ারম্যানের দূর্নীতি প্রত্যক্ষ করার পর স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়লে সাংসদ মুজিবুর রহমান তাৎক্ষণিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আসামিদের বিরুদ্ধে  আইনগত ব্যবস্থা  নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় আসামি জসীম ও শহীদুল সাংসদকে দেখে নেয়ার হুমকি এবং উপস্থিত লোকজনকে বেশি বাড়াবাড়ি করলে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন।

 

 

 

প্রসঙ্গত, খানখানাবাদ ইউনিয়নের এক হাজার জেলের জন্য মাথাপিছু ৫৬ কেজি করে ৫৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। বুধবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ৭ টায় খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা এসব চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে চালের বস্তা খোলা শুরু করেন। তখন ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি চালের বস্তা খোলার আগে সব বস্তা গুণে তারপর বিতরণের কথা বলেন। এসময় জনসমক্ষে সব বস্তা গণনার পর ১৬ টন চাল কম পাওয়া যায়। অপরদিকে খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দারের কাছ থেকে চাল বুঝে পাওয়ার রশিদ চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

 

এই বিষয়ে সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইলে পরিষদের পক্ষ থেকে তারা তাৎক্ষণিক কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এসময় এমপি মুজিবুর রহমান জেলের চাল আত্মসাতের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি সেখানে একটি ট্রাকভর্তি ৫ টন চাল জব্দের নির্দেশ দেন সাংসদ। পরে সেগুলো থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।