বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর হরতাল ও অবরোধসহ নানান কর্মসূচি ঘিরে দেশে প্রতিদিন গড়ে সাতটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে দৈনিক গড়ে পাঁচটি বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা মহাসমাবেশের দিন (২৮ অক্টোবর) থেকে সোমবার (২০ নভেম্বর) পর্যন্ত ২৪ দিনে সারাদেশে মোট ১৮৫টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮টি বাস, ২৬টি ট্রাক, ১৩টি কাভার্ড ভ্যান, আটটি মোটরসাইকেল, দুটি প্রাইভেটকার, তিনটি মাইক্রোবাস, তিনটি পিকআপ, তিনটি সিএনজি, দুটি ট্রেন, তিনটি লেগুনা, নছিমন, একটি ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি, একটি পুলিশের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১৫টি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। স্থাপনার মধ্যে বিএনপির দলীয় কার্যালয় পাঁচটি, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় একটি, পুলিশ বক্স একটি, কাউন্সিলর অফিস একটি, বিদ্যুৎ অফিস দুটি, বাস কাউন্টার একটি, শোরুম দুটিসহ আরও দুটি স্থাপনা দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়েছে।
তালহা বিন জসিম জানান, এসব আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩৪১টি ইউনিট ও এক হাজার ৮৮৮ জন জনবল কাজ করেছে।
তিনি জানান, সারাদেশের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে সবমিলিয়ে মোট ৩৪ জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাকি ৩০টি জেলায় আগুনের ঘটনা ঘটেনি।
আর উপজেলার হিসাবে দেশের ৬০টি উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাকি ৪৩৫টি উপজেলায় কোনও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। জেলা হিসেবে গাজীপুরে, উপজেলা হিসেবে বগুড়া সদরে আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
তালহা বিন জসিম আরও জানান, ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা সিটিতে ৯৫টি, ঢাকা বিভাগে ৩৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২টি, রাজশাহী বিভাগে ২৪টি, বরিশাল বিভাগে সাতটি, রংপুর বিভাগে সাতটি, খুলনা বিভাগে দুটি, ময়মনসিংহ বিভাগে দুটি এবং সিলেট বিভাগে একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৬০টি, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩৫টি আগুনের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ১৭টি, গুলিস্তানে ৯টি, নয়াপল্টন-কাকরাইল এলাকায় সাতটি, খিলগাঁও-মুগদা এলাকায় সাতটি, পোস্তাগোলা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় সাতটি, মতিঝিল-আরামবাগ এলাকায় পাঁচটি, মোহাম্মদপুর ও বারিধারায় চারটি করে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গাজীপুরে ১৬টি, চট্টগ্রামে ১৪টি, বগুড়ায় ১৩টি, নারায়ণগঞ্জে ছয়টি, মানিকগঞ্জে চারটি, ফরিদপুরে চারটি, লালমনিরহাটে চারটি ও নাটোরে চারটি করে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।
উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বগুড়া সদরে আটটি, গাজীপুর সদরে ছয়টি, নারায়ণগঞ্জ সদরে চারটি, ফেনী সদরে তিনটি এবং কালিয়াকৈর উপজেলায় চারটি করে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস জানান, অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমে সারাদেশে ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মীসহ তিন জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে এসব অগ্নিকাণ্ডে নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।