চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা খাগড়াছড়ি শহর। অনেকটা উপত্যকার মতো শহরের ভৌগলিক গঠন। শহরের অদূরে আপার পেরাছড়ার গ্রামের একটি সড়কের নাম ‘নিউজিল্যান্ড’। নিউজিল্যান্ড সড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ ধানখেত। সেই খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে শত শত টিয়া।
বাংলা ঋতু অগ্রহায়ণের শেষে নিউজিল্যান্ড সড়কের দুই পাশে এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। পাকা ধানের খোঁজে খোলা আকাশে চক্কর মারছে টিয়া পাখির দল। প্রতিটি ঝাঁকে অন্তত ৩ শতাধিক টিয়া থাকে। নিউজিল্যান্ডে এ রকম কয়েকটি টিয়ার ঝাঁকের দেখা মেলে। এসব পাখি মধুপুর, আপার পেরাছড়ার বিভিন্ন গ্রামে বিচরণ করে।
স্থানীয় কৃষক লাপ্রু মারমা, উচিং মারমা বলেন, ‘গত কয়েক বছর এ রকম টিয়া দেখা যায়নি। এ বছর প্রচুর টিয়া পাখি দেখা যাচ্ছে। পাকা ধানখেতে টিয়ার ঝাঁক ধানখেতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে বেড়াই। সকাল ও বিকালে টিয়া পাখির ঝাঁক পাকা ধান খেতে আসে। এসব পাখি ফসলের ক্ষতি যাতে না করে, সেকারণে পাহারা দিতে হয়। তারপরও টিয়া পাখি ধান খেয়ে ফেলে।’
খাগড়াছড়ি বন্যপ্রাণীবিষয়ক আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা জানান, ‘কয়েক বছর পরপর এখানে প্রচুর টিয়া পাখি পাকা ধান খাওয়ার জন্য দল বেঁধে আসে। এখানে মূলত ঝাঁকে ঝাঁকে মদনা টিয়া এসেছে।’ এই মদনা টিয়ার আকার কাকের মতো, লম্বায় ৩৮ সেমি.। লালচে পেট ছাড়া দেহ সবুজ। কাঁধ হলুদ। মাথা ধূসর। চোখ হলুদ। বেগুনি-নীল লেজের আগা হলদে। পুরুষ টিয়ার ওপরের চঞ্চু গাঢ় লাল। পাহাড়ের সবুজ বনে এদের প্রায় দেখা যায়।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির বলেন, ‘জেলায় সাম্প্রতিককালে পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগ তৎপর রয়েছে। পাখি শিকার বন্ধে সচেতনতা তৈরিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে খাগড়াছড়িতে পাখি অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ বছর প্রচুর টিকা দেখা যাচ্ছে। পৌষের মাঝামাঝি পর্যন্ত টিয়া দেখা যাবে। এরপর আবার বনে ফিরে যাবে।’