রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তারা হলেন- মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর।
বৃহস্পতিবzর (২৭ জুলাই) রাত ১০ টা ১ মিনিটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে একসঙ্গে দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর আগে তাদের কালিমা পাঠ ও তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম। এরপর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একই মঞ্চে একসঙ্গে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল।
আসামিদের ফাঁসি কাষ্ঠে ঝোলানোর সময় উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল, জেলার নিজামুদ্দিনসহ চিকিৎসক টিম।
জানা গেছে, সিনিয়র জেল সুপার সাদা রুমাল ফেলে সংকেত দেওয়া মাত্রই হ্যান্ডেল টেনে ফাঁসি কার্যকর করেন প্রধান জল্লাদ। তার সঙ্গে একজন সহযোগী ছিলেন। বাকি ছয় জনের মধ্যে চার জন দুই আসামিকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান। আর দুই জন তাদের কালো কাপড়ের টুপি ও গলায় দড়ি পরিয়ে দেন।
আলোচিত এই মামলায় দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেওয়াল ঘেঁষে এবং ১৪ নম্বর সেল ও যমুনা ওয়ার্ডের (পাগলা ওয়ার্ড নামে পরিচিত) পাশেই এই ফাঁসির মঞ্চ। এ ছাড়াও যে দড়িতে ঝোলানো হয়েছে তাতে আসামিদের তিন গুণ ওজনের বস্তা বেঁধে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফাঁসির দড়িটিও প্রস্তুত করা হয়েছিল। কারাগারের নির্ধারিত এই ফাঁসির মঞ্চ এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রস্তুত করা হয়েছিল।
কারাগারের পক্ষ থেকে আট জনের দুটি মেডিক্যাল টিম তৈরি করা হয়েছিল। তারা ফাঁসি কার্যকরের আগে শারীরিক পরীক্ষা করেন। পরবর্তী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে কারা চিকিৎসক ডা. জুবাইর হোসেন ও ডা. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দুইটি টিম কারাগারে প্রবেশ করেছিল। একই সময় জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনও প্রবেশ করেছেন।
এদিকে, ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশপাশের এলাকা।
এর আগে, মঙ্গলবার দুই আসামির পরিবারের ৩৫ সদস্য তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। পরে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই দুজন হলেন- জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল। রিভিউ খারিজের আদেশ কারাগারে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আসামিরা। সেই প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। নাকচের সেই চিঠি গত ৬ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। জেল কোড অনুযায়ী চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকরের নিয়ম রয়েছে।