চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ১৬ জন সংসদ সদস্যের ‘পছন্দের’ ১৬ ব্যক্তিকে মহানগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা কমিটিতে রাখা হবে। ইতোমধ্যে যুবলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই সাংসদদের দুটি করে নাম দিতে বলা হয়েছে। বেশিরভাগ সাংসদ তাদের পছন্দের ব্যক্তির তালিকা ‘ডিও লেটার’ হিসেবে পাঠিয়েছেন। তবে এসব ‘ডিও লেটারে’ কোনো কোনো সাংসদ দুটির বেশি নামও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, গোপনে এসব ‘ডিও লেটার’ জমা হয়েছে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতার হাতে।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাংসদদের ‘সম্মান’ দিতেই তালিকা চাওয়া হয়েছে। কারণ সাংসদরাই এলাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ভূমিকা রাখেন। সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রাজনীতি করেন। তাই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকাকে আরও সমৃদ্ধ করতে ‘আনঅফিসিয়ালি’ প্রতি সাংসদের কোটায় একজন করে ব্যক্তিকে যুবলীগে পদ দেওয়া হতে পারে।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, সাংসদদের মধ্যে চট্টগ্রাম যুবলীগের তিন সাংগঠনিক ইউনিটে তিনজন আছেন প্রভাবশালী। এরা শীর্ষ পদগুলোতে সরাসরি মাথা ঘামাবেন। কারণ তাদের ব্যক্তিগত প্রভাবে রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক ইউনিটে। তাই এই সাংসদরা একাধিক পদ নিজেদের ভাগে পেতে পারেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতা বলেন, স্থানীয় সাংসদরা অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সাথে নিয়ে কাজ করেন। কমিটিতে তাদের চাওয়া থাকবে— এটা খুব স্বাভাবিক। সে অনুযায়ী স্বচ্ছ ও ত্যাগীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে সাংসদরা চাইলেও বিতর্কিতরা পদ পাবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রামের দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলে নাঈমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ২৮ থেকে ৩০ মে চট্টগ্রামে যুবলীগের তিন ইউনিটের সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ জানান, চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য একজন করে নাম প্রস্তাবের অনুরোধ করা হয়েছে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে। নির্ধারিত সময়ের পরও কারও নাম ঠিক করতে পারেননি নেতারা। কাজেই কেন্দ্র থেকে শীঘ্রই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা বর্তমানে চাইছেন তার সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ‘সুদৃষ্টি’। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনও যুবলীগের শীর্ষ পদে চান নিজের অনুসারীদের।
এদিকে উত্তর জেলায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামের আশেপাশে দেখা যাচ্ছে পদপ্রত্যাশীদের।
অন্যদিকে দক্ষিণ জেলায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, পটিয়ার সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক এবং সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন যুবলীগের পদপ্রত্যাশীরা।
২৮, ২৯ ও ৩০ মে যথাক্রমে অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ, উত্তর ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন। তিন ইউনিটের সম্মেলন শেষ হলেও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের শেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৮ বছর আগে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় সম্মেলন হয়েছে দীর্ঘ ১৯ বছর পর। আর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় সম্মেলন করে যুবলীগের কমিটি গঠনের ঘটনা হবে এবারই প্রথম। এ জন্য গত ২ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সব মিলিয়ে জমা পড়েছে ১৮৯টি। এর মধ্যে আগ্রহী বেশি মহানগরে। এখানে সভাপতি পদে ৩৫ আর সাধারণ সম্পাদক পদে লড়তে চান ৭১ জন। অন্যদিকে, উত্তর জেলায় সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন আর দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে ১৩ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯ জন জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন।
সংগঠনের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১৩ সালের ১৩ জুন। মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম দিদার, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক সুমনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩ মাসের জন্য অনুমোদিত কমিটি পার করেছে ৯ বছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ১৩১ সদস্যবিশিষ্ট হওয়ার কথা। কিন্তু পরে আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি।
একইভাবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুনকে সভাপতি ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয়েছিল সেই কমিটি।
অপরদিকে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১০ সালে। আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি ও পার্থ সারথী চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা সেই কমিটি পার করেছে এক যুগ।