গ্রেটেস্ট ডিস্টেন্স সাইকেল (নো হ্যান্ড) বা দুই হাত ছেড়ে সাইক্লিং এর সর্বোচ্চ দূরত্ব পাড়ির গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করতে চান বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশনের অ্যাথলেট তাম্মাত বিন খয়ের। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশকে সাইক্লিংয়ে আরও একটি বিশ্বরেকর্ড এনে দিতে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।
তাম্মাত ভাঙতে চান ভারতীয় তরুণ ভিগনেশ কুমারের রেকর্ড, যিনি দুই হাত ছেড়ে ১২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ডটি গড়েছিলেন ২০১৭ সালে।
চার বছরের ব্যবধানে ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই রেকর্ডটি নিজের করে নিতে চান তাম্মাত। চলতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের ৬০ কিলোমিটার রোড টিম টাইম ট্রায়ালে সিলভার মেডেল জিতেছিলেন তাম্মাত। যদিও ওই আসরে ছয়টি ইভেন্টে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও ইনজুরিতে পড়ে বাকি পাঁচটি ইভেন্টে খেলা হয়নি। আক্ষেপ থাকলেও প্রায় দুই বছর ধরে তাম্মাতের সব পরিশ্রমের ফল দুই হাত ছেড়ে সাইক্লিং এর সর্বোচ্চ দূরত্ব পাড়ির গিনেস রেকর্ড গড়ে না পাওয়ার কষ্ট মিটিয়ে দিতে চান তিনি।
তাম্মাত বিন খয়ের এর বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও জন্ম চট্টগ্রামে। বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেয়ামত আলী সিকদার পরিবার নিয়ে থাকেন নগরের হালিশহরে। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে তাম্মাত সবার ছোট। আর তাম্মাত খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ছেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে গণিত বিষয়ে স্নাতক শ্রেণিতে।
গত আগস্ট মাসে গ্রেটেস্ট ডিস্টেন্স সাইকেল (নো হ্যান্ড) রেকর্ডটিতে বিশ্বসেরা হওয়ার আবেদন জানিয়ে সব কাগজপত্র জমা দেন। আবেদনের পর গত অক্টোবর মাসে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নির্দেশনাসহ মেইল পান তিনি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৬ ডিসেম্বর সকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম আউটার রিং রোডে বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
ইতিমধ্যে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণের নির্দেশনা মোতাবেক সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাম্মাত তরুণদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিটিভির পর্দায় ইত্যাদির এক আয়োজনে তাম্মাত দেখলেন, একজন বৃদ্ধ সাইকেলে চেপে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছেন। সেই থেকে এমন রেকর্ড গড়ার নেশা তাম্মাতের মাথায় এসে চাপে। তখন বয়স মাত্র ১২ বছর। একদিন তিনি তার বাবার কাছে বায়না ধরলেন তারও একটি সাইকেল চাই। পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবা নেয়ামত আলী পড়াশোনার দিকে খেয়াল রেখে সাইকেল কিনে দেননি। যার কারণে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া তাম্মাতের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। অবশেষে ২০১৬ সালে নিজ টিউশনির রোজগারের টাকা জমিয়ে কিনে নিলেন একটি সাইকেল। সাইকেলটি নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে রাইড দেওয়া শুরু করেন একটি সাইক্লিং কমিউনিটি গ্রুপের মাধ্যমে। এভাবেই সাইক্লিং জগতে প্রবেশ করেন তিনি।
মায়ের মুখে মুক্তিযোদ্ধা নানা খলিলুর রহমানের ঢাকা-গোপালগঞ্জ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর লক্ষ্য স্থির করেন দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পাড়ি জমানোর। তাম্মাতের শুরুটা হয় ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল। ২৪ দিনে দেশের ৬৪ জেলায় ভ্রমণ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ২০১৯ সালে মাত্র ১৪ দিন ২০ ঘন্টায় নিজের গড়া রেকর্ডটি ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন এই তরুণ। শুধু তাই নয়, পায়ে হেঁটেও রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম লিখেছেন এই তরুণ অ্যাথলেট।
২০১৮ সালের ১৮ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২৪ দিনে দক্ষিণের জেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার দূরে উত্তরের সবশেষ জেলা তেঁতুলিয়া পাড়ি জমান তিনি। তার পুরো পথচলা পর্যবেক্ষণ করে তারই গঠিত একটি টিম, যারা সব সময়ই এই তরুণের এমন সাহসী উদ্যোগগুলোতে সঙ্গী হয়ে ছিলেন।
শুধু ভ্রমণ আর রেকর্ডেই নিজের পথচলাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি তাম্মাত। ২০১৮ সালে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হেঁটে ভ্রমণের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষকে নিয়মিত দুই কিলোমিটার হাঁটায় উদ্বুদ্ধ করাসহ বাল্যবিয়ে রোধে সাইকেলে চেপে ক্যাম্পেইন ও ২০১৯ সালে ৬৪ জেলায় ভ্রমণের মধ্যদিয়ে দেশের প্রতিটি স্কুলে ইমার্জেন্সি স্যানিটারি ন্যাপকিন বক্স স্থাপনে সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছেন তিনি।
সাইক্লিংয়ে গিনেস বুক রেকর্ড করতে চাওয়া তাম্মাত বিল খয়ের বলেন, দুই হাত ছেড়ে সাইক্লিং এর সর্বোচ্চ দূরত্ব পাড়ির গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডটি ২০১৭ সালের। ১২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ডটি গড়েছিলেন ভারতীয় তরুণ। চার বছরের ব্যবধানে ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই রেকর্ডটি ভাঙতে চাই। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আউটার রিং রোডে সকাল ছয়টায় যাত্রা শুরু হবে। এতে প্রায় ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগবে। বন্ধু-বান্ধবীদের সহযোগিতায় ও ডোনেশনের মাধ্যমে খরচটা বহন করা হচ্ছে।