আজ মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১

কর্ণফুলী উপজেলায় শুঁটকি পল্লী ও সম্ভাবনা

মু. বেলায়েত হোসেন, কর্ণফুলী : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৫ জানুয়ারী ২০২২ ০৭:২৫:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর

একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে সাম্পান, শুঁটকি, দরগা- এ নিয়ে চাটগাঁ। চাটগাঁয়া মানুষের পাশাপাশি সারা দেশে ও দেশের সীমানা পেরিয়ে বহিঃবিশ্বে শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার, কুতুবদিয়ার শুঁটকি পল্লীর সাথে পাল্লা দিয়ে বাজার দখল নিচ্ছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠা শুঁটকি পল্লীর শুঁটকি । কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর ৭নং ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে ১১ টি শুটকি চাঙ এছাড়া চরপাথরঘাটা ও শিকলবাহায় রয়েছে কয়েকটি শুটকির চাঙ।

 

প্রতিদিন সূর্যের তাপে এসব এলাকায় ছোট-বড় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির শুটকি। শীতের শুরুতে মূল মৌসুম শুরু হয়। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় দ্রুত শুকায় শুঁটকি। এজন্য বছরের এ সময়ে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে শুরু হয় শুঁটকি তৈরির উৎসব।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুঁটকিপল্লীতে শুঁটকি শুকানো হচ্ছে কয়েক ধাপে। প্রথমে মাছের পেট থেকে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে একটি দল। আরেক দল পেট কাটা মাছ ধুয়ে নিচ্ছে পানিতে। কেউ সেই ধোয়া মাছ শুকাচ্ছে কেউবা হালকা শুকানো মাছে লাগাচ্ছে লবণ। এরপর শুঁটকি শুকাতে দেয়া হয় চাঙে। প্রকারভেদে শুঁটকি শুকাতে সময় লাগে এক থেকে তিন সপ্তাহ। শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এখানে কোনও প্রকার ফরমালিন ও মেডিসিন ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। স্বাদের মতো নামেও বৈচিত্র্য আছে এখানকার শুঁটকির।

কথা হয় শুঁটকি ব্যবসায়ী কালা মিয়া (৫৮) সাথে তিনি জানান ২০০০ সালের শুরুতে ব্যবসা শুরু করেন ইছানগর ডায়মন্ড ফাক্ট্যারীর সংলগ্ন কর্ণফুলীর তীরে। বর্তমানে শ্রমের ভিত্তিতে ২ জন ও মূলধন ভিত্তিতে ২ জন।  ৪ জনের যৌথ ব্যবসা। যা দেড় কোটি টাকার অধিক মূলধন নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। নারী পুরুষ মিলে ১০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান এস. কে ফিস ট্রেডার্স নামক এই শুঁটকি পল্লীতে। এর নিকটবর্তী জায়গায় আলা উদ্দিন, শেখ আহমেদ ও নুরুল আবছারের আরও ৩ টি শুঁটকি পল্লী এখানেও ২০০ অধিক নারী পুরুষের কর্মসংস্থান।

ফিসিং বোট, ফিসিং জাহাজ থেকে বাৎসরিক চুক্তিতে মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি উৎপাদন হয় এসব চাঙে।

 

এখানে যেসব মাছের শুঁটকি বেশি তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে আছে ছুরি, ফাঁইস্যা, লইট্টা, লাক্ষ্যা, কোরাল, রূপচাঁদা, পোয়া ও ছোট-বড় মিশালি জাতের শুঁটকি।

 

প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি। করোনাভাইরাসের কারণে টানা কয়েক মাস বিক্রি বন্ধ থাকায় এবারের শীতে বাড়তি শুঁটকি বিক্রি হওয়ার আশায় আছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে শুঁটকিপল্লী গড়ে দিলে তাদের সুবিধা হতো।

কোনও প্রকার ফরমালিন ছাড়াই এখানে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন হয় বলে জানান তিনি।

 

শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. নুরুল আবছার কালো সওদাগর বলেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে শুঁটকির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাই উৎপাদনের মৌসুম হওয়ায় শুঁটকির দাম কিছুটা কম।