কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া কোনারপাড়ার বাসিন্দা নুর আয়েশা। বয়স প্রায় ৭০ বছর। স্বামী আবুল খাইর মারা গেছেন ৯ বছর আগে। বয়সের ভার শরীরে। তেমন হাঁটাচলা করতে পারেন না। শারীরিকভাবেও অসুস্থ। এমন সময় আগলে রাখার বদলে মারধর করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিল সন্তানেরা। জীবনসায়াহ্নে রাস্তায় বা অন্যের দ্বারে নুর আয়েশা। মানসিক যন্ত্রণা আর নির্ঘুম রাত কাটছে তার।
অভিযোগ উঠেছে, প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে নেন ছেলে সাবের। এর পরও বৃদ্ধা মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে নারাজ। উল্টো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
জমিজমা নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়ার দু-মাস পার না হতেই বাড়ি ছাড়া হতে হয় বৃদ্ধা মাকে। এ ঘটনায় ছেলের বিচার চেয়ে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ওই বৃদ্ধা মা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কষ্টের জমানো টাকায় ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন মা নুর আয়েশা। সেই সন্তান বৃদ্ধা মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিচ্ছে না। জনম দুঃখিনী মা এখন রাস্তায়। এই ঘরে, ওই ঘরে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্বামী আবুল খাইর ৯ বছর আগে মারা যান। মৃত্যুর পূর্বে স্ত্রী নুর আয়েশার নামে ২০ শতক জমি লিখে দেন।
বৃদ্ধা নুর আয়েশা জানিয়েছেন, তার বিয়ের ১৪/১৫ বছর পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো লালন-পালন করতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। পরে একটু সুখের আশায় ছেলে সাবেরকে ধার-দেনা ও জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ পাঠান। এরপর থেকে সাবেরের স্বভাব চরিত্র পাল্টে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার ছেলে সাবেরের কাছে থাকতেন। মায়ের নামের ২০ শতাংশ জমি নিজের নামে লিখে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন সাবের। একপর্যায়ে মায়ের জমি তিনি নিজের নামে লিখে নেন। পরবর্তীতে গত ছয়মাস পূর্বে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে বসতবাড়িটিও নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য মাকে চাপ দিতে থাকেন। জমি লিখে নেওয়ার কিছুদিন পর মাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন।
স্থানীয় মসজিদ কমিটি ও মেম্বারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি জানার পর বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠক করেন। ছেলে সাবেরের কারণে কোনো সমাধান হয়নি।
নুর আয়েশা বলেন, 'স্বামীর দেওয়া ২০ শতক জমিতে চাষাবাদ করতাম। ফসলের অল্প টাকায় কোনমতে সংসার চালতো। ছেলে ভালো থাকুক, থাকুক সুখে শান্তিতে। এমনই ভাবনায় ছিল।'
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। মায়ের চিন্তা আর ছেলের আচরণের মিল নেই। ছেলের নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হলেন মা।
অনেকটা নির্বাক নুর আশেয়া অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, কষ্টের টাকায় ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছি। শেষ বয়সে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকব। কিছু হলে ছেলে সুচিকিৎসা করাবে, সংসার চালাবে। তাই নিজের কথা না ভেবে ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং তার কথায় ভুলে গিয়ে অন্য ছেলে মেয়েদের না জানিয়ে সব জমি-জমা ছেলের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। দু-মাস না যেতেই ছেলে ও পুত্রবধূ ভিন্ন আচরণ শুরু করেছে। ঠিক মতো খাবার দেয় না। কোনদিন ভাত দিলেও সঙ্গে তরকারি নাই। যেদিন বেলা গড়িয়ে যদি দুপুরের ভাত খেতে দিত, সেদিন রাতে আর খাবার দিত না। ছেলেকে এসব কথা জানালে উল্টো আমার ওপর চড়াও হয়ে গালিগালাজ করত।
নুর আয়েশা বলেন, ‘ছেলে সাবের আমার নামের জমি লিখে নিয়ে আমাকে বসতঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি নিজের ভিটায় ফিরতে চাই।’
সাবেরের বোনেরা অভিযোগ করেন, সাবের বিদেশ থাকাকালীন সময়ে মা-ছোট ভাইয়েরা মিলে ঘরটি তৈরী করে। দেশে ফিরে বাড়িটি তার দাবি করে। মাকেসহ সবাইকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
ছোট ভাই আব্দুল্লাহর ভাষ্য, জমি লিখে নিয়ে মাকে ঘর থেকে বের করে দেয় সাবের। প্রতিবাদ করলে ভাই ইউনুচ ও ভাগ্নেসহ আমরা ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দেন।
স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি মাষ্টার খুরশেদ আলম, আ.লীগ নেতা মো: আলম, শালিসকারক বাদশা মিয়া, শহিদুল্লাহ শকু, ছলিম উল্লাহ বলেন, ‘নুর আয়েশা স্থানীয়দের বাড়িতে বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ নিয়ে একাধিকবার সালিসও হয়েছে। কিন্তু ছেলে সাবের সালিসের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাকে ঘরে উঠতে দেননি। উল্টো মামলা করে মা ও ভাইবোনদের হয়রানি করছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘সমাজ কমিটির পক্ষ থেকে সাবেরের সাথে যোগাযোগ করে তার মাকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও সে (সাবের) কারও কোন কথা শুনছেন না।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাবের বলেন, বিষয়টি তাদের পারিবারিক। এখানে কাউকে নাক গলাতে হবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাবের বলেন, বিষয়টি পারিবারিক। এখানে কাউকে নাক গলাতে হবে না।
এসময় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছেন মন্তব্যও করেন করেন সাবের।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, বিষয়টি অমানবিক। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।