আজ বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ওয়ানডে সিরিজ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

Author Thedaily Shangu | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৭ জুলাই ২০২২ ০৩:৩২:০০ পূর্বাহ্ন | খেলাধুলা

টেস্টে ভরাডুবি। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ঘুরে দাঁড়ানো যায়নি। একের পর এক হারে ব্যর্থতার পাল্লা কেবলেই হচ্ছিল ভারী। তবে ‘প্রিয়’ ফরম্যাট ওয়ানডে আসতেই চেনারূপে বাংলাদেশ। প্রথম দুটি জিতে নেওয়ায় সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। শেষটা জিতে সুযোগ ছিল হোয়াইটওয়াশের আনন্দে মাতার। তামিম ইকবালরা সেটি মিস করেননি। তৃতীয় ওয়ানডেতেও ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে ৩-০তে শেষ করেছে ৫০ ওভারের লড়াই।

 

শনিবার গায়ানার শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে স্বাগতিকরা ৪৮.৪ ওভারে অলআউট হয় ১৭৮ রানে। লক্ষ্য সহজ হলেও আগের দুই ওয়ানডের মতো সহজে পেরিয়ে যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। বেশ ভালোই লড়াই করতে হয়েছে। ৯ বল আগে ৬ উইকেট হারিয়ে এসেছে জয়। ফলে এ নিয়ে ওয়ানডেতে ক্যারিবিয়ানদের তৃতীয় হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিলো বাংলাদেশ।

 

১৭৯ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল মন্থর। তাছাড়া ক্রিজে টিকে থাকার লড়াই করলেও নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যর্থ হন। ১৩ বলে মাত্র ১ রান করে বিদায় নেন বাঁহাতি ব্যাটার। তার আউটের পর অবশ্য সফরকারীদের পথে ফেরান তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ৫০ রানের জুটি। যদিও গুদাকেশ মোতির প্রথম শিকার হয়ে তামিম ফিরলে ভাঙে এই জুটি। বাংলাদেশ অধিনায়ক ৫২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে করেন ৩৪ রান।

 

 

তামিম ফিরলেও লিটন পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি। যদিও ফিফটি পূরণের পরপরই মোতির দ্বিতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন তিনি। ৬৫ বলে খেলা ৫০ রানের ইনিংসে লিটন মারেন ৫ বাউন্ডারির সঙ্গে এক ছক্কা। লিটন চলে যাওয়ার পরপরই আবার ধাক্কা বাংলাদেশ দলে। ওই মোতির বলেই বোল্ড হয়ে রানের খাতা খোলার আগে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান আফিফ হোসেন। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৯৬ রান।

 

পরবর্তী সময়ে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে চাপ কাটিয়ে ওঠার কাজ করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন। যদিও মোতির চতুর্থ শিকারে পরিণত হয়ে ১৪ রানে তাকে থামতে হয় তাকে। তখন আশার আলো হয়ে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের ব্যাটে লক্ষ্যের পথেই ছুটছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নিকোলাস পুরানের বলে তাকে থামতে হয়। শাই হোপের স্টাম্পিং হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহ ৬১ বলে মাত্র এক বাউন্ডারিতে করেন ২৬ রান।

 

 

মাহমুদউল্লাহর আউটে শঙ্কা মেঘ জন্মেছিল বাংলাদেশ ক্যাম্পে। তবে নুরুল হাসান সোহানের চমৎকার ব্যাটিংয়ে সব শঙ্কা কাটিয়ে ফোটে জয়ের আলো। অন্যপ্রান্ত থেকে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সোহান ৩৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে। অন্যদিকে মিরাজ ৩৫ বলে কোনও বাউন্ডারি ছাড়াই হার না মানা ১৬ রানে দলের জয় নিশ্চিত করেন মাঠ ছাড়েন।

 

ক্যারিবিয়ানদের সবচেয়ে সফল বোলার মোতি। এই স্পিনার ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ২৩ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।

 

বোলারদের ম্যাচে আগেই আলো ছড়িয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। ২৭ মাস পর ওয়ানডেতে ফিরেই নিয়েছেন ৫ উইকেট। দুর্দান্ত বোলিংয়ে তার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। আর সিরিজসেরা হয়েছেন তামিম।

 

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি ক্যারিবিয়ান ব্যাটাররা। তাইজুলের ৫ উইকেটের সঙ্গে নাসুম আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের ২টি করে উইকেটে অল্পতেই আটকে রেখেছে স্বাগতিকদের। তারপরও রান ১৭৮ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নিকোলাস পুরানের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক খেলেন ৭৩ রানের ইনিংস।

 

প্রথম দুই ওয়ানডেতে সুযোগ হয়নি তাইজুলের। শেষ ওয়ানডেতে একাদশে জায়গা পেয়েই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। চমৎকার বোলিংয়ে শুরুতেই চেপে ধরেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের। বল হাতে তুলে নিয়েই পেয়ে যান উইকেট। নিজের প্রথম বলে ফেরান ব্রেন্ডন কিংকে। স্বাগতিক ওপেনারকে ক্লিন বোল্ড করে দেখান সাজঘরের পথ। ফেরার আগে কিং করেন মাত্র ৮ রান।

 

সঙ্গীকে হারিয়ে শাই হোপ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ক্রিজে টিকে থাকার। যদিও তার প্রতিরোধ ‍খুব বেশি সময় টিকেনি। তাইজুলের বলে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের স্টাম্পিং হন মাত্র ২ রান করে। ওই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার আঘাত। এবার মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার শামারাহ ব্রুকস। বাঁহাতি পেসারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ৪ রান করে ফিরে যান ওয়ান ডাউনে নামা এই ব্যাটার।

 

পরিবর্তনটা মন্দ হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কাইল মায়ার্সকে বসিয়ে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কেচি কার্টিকে। সুযোগ পেয়ে চাপের মধ্যে কার্যকরী ইনিংস খেলেন, তবে ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তিনি। নাসুম আহমেদের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান ৩৩ রানে। ৬৬ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ২ চার ও ১ ছক্কায়।

 

কার্টির বিদায়ে ভাঙে পুরানের সঙ্গে তার ৬৭ রানের জুটি। এরপর ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জুটি বাঁধেন পাওয়েলের সঙ্গে। যদিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি পাওয়েল। এই হার্ডহিটার ২৯ বলে ১ ছক্কায় করেন ১৮ রান। একপ্রান্তে যখন সতীর্থদের ব্যর্থতার মিছিল চলছিল, তখন নিজের মতো খেলে যাচ্ছিলেন পুরান। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ধারার বিপরীতে গিয়ে পূরণ করেন হাফসেঞ্চুরি। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলেন চমৎকার সব শট। শেষমেশ তার ব্যাট থেকে আসে ৭৩ রানের ঝলমলে ইনিংস। ১০৯ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়। শেষ দিকে রোমারিও শেফার্ডের ২২ বলে ১৯ রানে ১৭৮ রানে শেষ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।

 

বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার তাইজুল। এই স্পিনার ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ২৮ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। নাসুম ও মোস্তাফিজ দুজনই নেন ২টি করে উইকেট। আর একটি উইকেট পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৮.৪ ওভারে ১৭৮ (পুরান ৭৩, কার্টি ৩৩, শেফার্ড ১৯, পাওয়েল ১৮, কিং ৮, জোসেফ ৭*; তাইজুল ১০-২-২৮-৫, মোস্তাফিজ ৯-০-২৪-২, নাসুম ৯.৪-১-৩৯-২)।

 

বাংলাদেশ: ৪৮.৩ ওভারে ১৭৯/৬ (লিটন ৫০, তামিম ৩৪, সোহান ৩২*, মাহমুদউল্লাহ ২৬, মিরাজ ১৬*, মোসাদ্দেক ১৪; মোতি ১০-২-২৩-৪, জোসেফ ১০-০-২৫-১)।

 

ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

 

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী।

 

ম্যাচসেরা: তাইজুল ইসলাম।

 

সিরিজসেরা: তামিম ইকবাল।