আজ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

এক কর্মী নিয়োগেই ৩০ মাস, উদ্ভট সব কারণে আটকে আছে ১৭তম নিবন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৩ অগাস্ট ২০২২ ১০:০১:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা

নিবন্ধন পরীক্ষা নিতে প্রয়োজন হয় সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার প্রোগ্রামারের। প্রয়োজন দেখা দেওয়ার ৩০ মাস পার হলেও একজন সিস্টেম অ্যানালিস্টের ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। অ্যানালিস্ট নেই বলে নেওয়া যাচ্ছে না পরীক্ষা- এমন উদ্ভট কারণ দেখিয়ে আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ১৭তম নিবন্ধন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে আবেদন করেন ১১ লাখ ৭২ হাজার প্রার্থী। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০২০ সালের ১৫ ও ১৬ মে এবং ৭ ও ৮ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে ওই বছরের এপ্রিলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

 এরপর করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ‘শিগগিরই’ পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে আসছে এনটিআরসিএ। ওই অক্টোবর তো গেল, এ বছরের অক্টোবরও প্রায় এসে গেলেও তারা একজন ‘সিস্টেম অ্যানালিস্ট’-এর ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি, পরীক্ষা তো দূরের ব্যাপার।

১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষার কোনো আপডেট নেই। এ বছরের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি না তাও বলতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যাগুলো মিটিয়ে এই বছরের মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়ার। সিস্টেম অ্যানালিস্ট নিয়োগ হয়ে গেলে এই বছরের মধ্যেই সেটা সম্ভব হবে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয় । এবারও আগের মতোই ‘খুব শিগগিরই’ পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানিয়েছে তারা!

এনটিআরসিএর সদস্য (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) এবিএম শওকত ইকবাল শাহীন (যুগ্মসচিব) বলেন, ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষার কোনো আপডেট নেই। এ বছরের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি না তাও বলতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যাগুলো মিটিয়ে এই বছরের মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়ার। সিস্টেম অ্যানালিস্ট নিয়োগ হয়ে গেলে এই বছরের মধ্যেই সেটা সম্ভব হবে।

এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আর ভরসা করতে পারছেন না নিবন্ধন প্রার্থীরা। তারা চান দ্রুত সমাধান। পরীক্ষার্থীদের অনেকে বয়স পার হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন।

 এদিকে পরীক্ষা আয়োজনে অফিস স্পেসের সংকটকেও বড় মনে করছে এনটিআরসিএ। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরেও এনেছে তারা। সংকট সমাধানে শিক্ষাবোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও আবেদনকারীরা প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে পারল না, এ ব্যর্থতা এনটিআরসিএ’র। আমরা এনটিআরসিএতে গেলে তারা পুরোনো টেপ রেকর্ডের মতো বারবার সিস্টেম অ্যানালিস্ট নেই, জায়গার সমস্যা ইত্যাদির কথা বলে। সবশেষ গত ১৮ জুলাই তারা আমাদের জানায়, রুম সংকটের সমাধান হয়ে গেছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সিস্টেম অ্যানালিস্ট নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। সিস্টেম অ্যানালিস্ট পেলেই পরীক্ষা নেওয়া যাবে।

চলতি বছরের এপ্রিলে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিতে এনটিআরসিএ’র জটিলতা নিরসনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনটিআরসিএ’র অফিস স্পেসের জটিলতা নিরসন ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলোচনা করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ জটিলতাগুলো নিরসনের সিদ্ধান্তও নেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনটিআরসিএ’র পরীক্ষার জন্য সারা দেশে ১৯টি সেন্টার প্রয়োজন। ঢাকার বাইরে ১৮ জেলায় খুব বেশি পরীক্ষার্থী হয় না। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছেন ৫-৬ লাখ আবেদনকারী। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শেষ হলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিতে কর্তৃপক্ষের বেশি সময় লাগবে না।

আবেদনকারীরা বলছেন, আড়াই বছর পার হলেও এখনও প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি, এটা খুবই হতাশাজনক। অনেক প্রার্থীর বয়স ৩৫ বছর হয়ে গেছে। এছাড়া দ্রুত পরীক্ষা না হলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি থেকেও তাদের বাদ পড়ার শঙ্কা রয়েছে। দ্রুত পরীক্ষা না হলে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।