জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন সেবা নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে সংসদে বিল পাস করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩’ নামে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর বিরোধী দলীয় সদস্যদের জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নিষ্পত্তি করেন স্পিকার। গত ৪ সেপ্টেম্বর সংসদে বিলটি উত্থাপন করা হয়।
বিলের বিধান অনুযায়ী, আগামীতে জন্মের পর একটি স্বতন্ত্র আইডি নম্বর পাবেন দেশের সব নাগরিক। এ সংক্রান্ত কাজের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে একটি পৃথক ‘নিবন্ধকের কার্যালয়’ স্থাপন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। বিলে এনআইডি সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, ‘একজন নাগরিককে নিবন্ধক কর্তৃক কেবল একটি জাতীয় পরিচিতি নম্বর দেওয়া হবে, যাহা ওই নাগরিকের একক পরিচিতি নম্বর হিসেবে সর্বত্র ব্যবহৃত হইবে। এর অধীন প্রদত্ত জাতীয় পরিচিতি নম্বরের ভিত্তিতে একজন নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রয়োজনীয় তথ্য-সংবলিত একটি জাতীয়পরিচয় নিবন্ধন রেজিস্ট্রার থাকবে।’
বিলে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিক নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তসাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচিতি নম্বর পাওয়ার অধিকারী হবেন। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একজন নিবন্ধক থাকবে। নিবন্ধক সরকারের মাধ্যমে নিযুক্ত হবে এবং তাহার চাকরির শর্তাদি সরকার নির্ধারিত হবে। নিবন্ধক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালন করবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্তের সংশোধনের প্রয়োজন হলে নাগরিকরা আবেদনের ভিত্তিতে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি দিয়ে সংশোধন করতে হবে।’
বিলে অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে তিনি এ আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ এছাড়া ‘কোনো নাগরিক জ্ঞাতসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র নিলে তিনি এ আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং এ অপরাধের জন্য এক বছর, অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী অথবা এ আইন দ্বারা বা এর অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করে নিবন্ধকের কাছে সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা জাল পরিচয়পত্র বহন করলে একই শাস্তি পাবেন।
বিলে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি তথ্য-উপাত্তে অননুমোদিত প্রবেশ করলে বা বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করলে তিনি এ আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ নিবন্ধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী বা প্রতিনিধির এ অপরাধের জন্য একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত সেবাটি জনগণের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। এ আইনটি নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নাগরিকের নিবন্ধিত হওয়ার এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।