আজ মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানের এলাকায় কমিটি নিয়ে বিরোধ, পাল্টাপাল্টি সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক,আনোয়ারা: | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৯ জুলাই ২০২৩ ০১:৫৭:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

আনোয়ারায় ঘরের বিরোধে পুড়ছে সুন্নিপন্থি রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। সংগঠনের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিনের নিজের এলাকায় উপজেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দুটিপক্ষ। কয়েক মাস আগেও দলের চেয়ারম্যানকে ঐক্যের প্রতীক বলা হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ বর্তমানে চেয়ারম্যানের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন বলে জানা গেছে।  

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের টিকেটে দলের চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিন গত সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা আসনে প্রার্থী হন। এর পূর্বে আরো ৫টি সংসদ নির্বাচনে এখান থেকে দলীয় প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভালো অবস্থান তৈরি করে। অভিযোগ উঠেছে, গত সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে দলীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিনকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়েছে। তারাই চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে।

প্রায় ৪ দশক আগে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলেও নেতৃত্বে দ্বন্দ্বে বার বার সংগঠনটিতে ভাঙ্গন তৈরি হয়েছে। সাবেক মহাসচিব মাওলানা জয়নুল আবেদীন জুবাইরের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ এই দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ নামে পৃথক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে।

এবার চেয়ারম্যানের নিজ এলাকায় দলটি বড় ধরনের বিরোধের মুখে পড়ল।  উপজেলার ১১ ইউনিয়নের সবগুলোতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কমিটি হওয়ছে। উপজেলা কমিটি গঠন নিয়েও চরম বিরোধ চলছে।  

ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বলয় বলতে কিছু নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠন চলে। হাতেগোণা ৪/৫জন নেতাকর্মী বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দক্ষিণ জেলা কমিটি থেকে উপজেলা কমিটি নিয়ন্ত্রন হয়। কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানের সেখানে কোন ভূমিকা নেই।

মাওলানা মতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত ইসলামী ফ্রন্ট একাংশের সদ্য ঘোষিত উপজেলা পশ্চিম পরিষদের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা কমিটির নির্দেশনায় আনোয়ারায় কমিটি ঘোষণা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী ফেসবুকে দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছেন। তারা লিখিত ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আনোয়ারায় রাজনীতি করতে পারবেনা বলে চেয়ারম্যান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এজন্য দ্রুততার সাথে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।  

দলের মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ হজ্ব পালনে সৌদি আরবে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।  

বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এমএ মাবুদ জানান, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে দুই বছর ধরে দলের দুটি পক্ষে বিরোধ চলছিল। গত ৮ জুলাই মাদারবাড়ি এলাকায় এক কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় কেন্দ্রীয় ৪জন নেতাসহ স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের ২৩ নেতা বৈঠক করেন। সেখানে সমঝোতা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত ছিল সিনিয়র ৩জন নেতা কমিটি গঠন করে ২১ জুলাই আনোয়ারা সম্মেলন করে নাম ঘোষণা দেবেন। কিন্তু তার আগে ১৫ জুলাই ও ১৮ জুলাই একটি পক্ষ উপজেলা পূর্ব ও পশ্চিম পরিষদের সম্মেলন করে কমিটি ঘোষণা করেছেন। কার ইন্ধনে এসব হয়েছে ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। এটি মোটিও শুভ লক্ষণ নয়। আগামী সাধারণ সভায় তদন্ত করে কমিটি করে এবিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আগামী ২১ জুলাই যারা সম্মেলন ডেকেছে মূলত তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর যারা চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করছে তারা হাতেগোণা কয়েকজন।

বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় সমঝোতা বৈঠকের বিষয়টি সত্যি। পরে এই মিটিংয়ে যোগ দিয়েছি বলে চেয়ারম্যান সাহেব বকাঝকা করেছেন।

পূর্ব পরিষদের সাবেক সভাপতি নাছির সিদ্দিকীও বলেছেন, সমঝোতা বৈঠকে ২১জুলাই কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছিল। পরে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা ও দক্ষিণ জেলার নির্দেশনায় আগেভাগে কাউন্সিল করতে হয়েছে।

দক্ষিণ জেলা ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতি আলী হোসাইন বলেন, আনোয়ারার শতকরা ৯০ শতাংশ নেতাকর্মী ২১ জুলাইয়ের সম্মেলনের পক্ষে। তারা ঘোষিত কমিটি মানে না। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে, কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যানকে মিসগাইড করে এই কাজ করেছে।

জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুল আলম বলেন, একটি মহল আনোয়ারায় পক্ষ পাতিত্বের রাজনীতি করছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের চেয়ারম্যান মাওলানা মঈনুদ্দীন আশরাফী ও মাওলানা সোলাইমান আনছারীর মধ্যস্থতায় সমঝোতার চেষ্টা করা হবে। ৫ তারিখ ঢাকায় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর এই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের বিবদমান একটি পক্ষের নেতা, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, দলের চেয়ারম্যান সবার অভিভাবক। কেউ বিভ্রান্তির মাধ্যমে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টর চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে।